পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘোষের মতন হয় না ।" মোহিতা শুনছিল, একটু হেসে বললে, “তাই তো । নতুন কিছুর ভিতরে এসেই প্রফেসরের গোলমাল হয়ে যায় । তিনি অতীতের পক্ষে চলতেই অভ্যস্ত । কোনো কিছুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে দেখবার প্রশ্ন উঠলে তিনি বলেন যে তা অন্তত ত্রিশ বছর আগের অতীতের জিনিস হওয়া চাই, ত্রিশ বছর আগেকার সামাজিক সংস্থান বা রাজনীতি বা ধর্মের আন্দোলন।’ মোহিত প্রফেসরের ঘরের আটকানো দরজাটার দিকে একবার অগড় চোখে তাকিয়ে বললে, ‘অণর সাহিত্যের বাণপার হলে তা অন্তত পঞ্চাশ ষাট বছর আগের কবিতা প্রবন্ধ সাহিত হওয়া চাই । একশ বছর আগের হলেই যেন ভাল হয় । রবীন্দ্রনাথকে তিনি আজকাল একটু-আধটু দেখছেন । ‘আজকাল—খুব হালে ? 'ইণ, মানে উনিশশ সাতচল্লিশের সেপ্টেম্বর থেকে ।’ ‘এব আগে ওঁর সাহিত্য তিনি পডেন নি ? ‘মন দিয়ে পড়েন নি, বলতেন জিনিসটা পাকুক—পাকতে থাকুক, পেকে নিক, পঞ্চ শ-ষাট বছর লাগে এক বোতল মদেরও তো ধাতস্থ হতে । ররীন্দ্রনাথ অগজ যা লিখলেন আগজই কি তাই পড়তে হবে ! ঠিকই বলেছেন, সাহিত্যের অধ্যাপক তো উনি । ‘ইংরেজি সাহিত্যের ।” ঠিকই বলেছেন প্রফেসর । আমাদের মৃত্যুর পঞ্চাশ-ষাট বছর পর যারা পডতে আসবে আমরা ধারণও করতে পারি না এমনই একটা আশ্চর্য আগস্বাদ পাবে তারা কবির সাহিত্যের থেকে । কেমন একটা অন্ধকার কোণে যেন পড়ে অাছে মদের বোতলগুলো, মাকড়ের জগলে ঢাকা পড়ে, একটা মস্ত ভাড়ারের দেশে নিরবচ্ছিন্ন ফুসলানি, খুনোখুনি, চশমখুরির ভিতর । বোতল টেনে-টেনে খাচ্ছে বটে, যারই মজি হচ্ছে । কিন্তু সৎ-অসৎ সনাতনী নিপাতনী উল্লুক জিরিয়ে নেবে খানিক—পঞ্চাশ-ষাট বছর পরে, মদের বোতলগুলো পেকে উঠবে—ভগড়গরের ঠাণ্ডা কোণে ; যারা খাবে তখন—আগঃ !' ' নিশীথও ঠিক এই কারণেই রবীন্দ্রসাহিত্য পড়ছে না আজকাল । মাঝে-মাঝে চেষ্টা করে দেখেছে । কয়েকটা কবিতা ছাড়া অার-কিছু ভাল লাগে না । তবে পঞ্চাশ-ষাট বছর পর ভাল লাগবে । কিন্তু সে তখন বেঁচে থাকবে না । ૨96