পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/২৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরির কথা ।” ‘ওঃ, ইম্পিরিয়াল লাইব্রেরি—” কলকাতায় থাকতে পড়ত মাঝে-মাঝে সে । কিন্তু অনেক দিন তো কলকাতা ছাড়া । বই-টই পড়ার চাড়ও কমে যাচ্ছে । নিশীথ মাথা নেড়ে বললে, —‘না, ওখানে আমি অনেক দিন যাওয়া-আসা বন্ধ করে দিয়েছি । আমি বই পড়ি না, পড়াশুনো ছেড়ে দিয়েছি । কিন্তু আমাকে দিয়ে বাংলার পাঠকসমাজকে বিচার করলে তো চলবে না । তারা পড়ে । আপনাদের লাইব্রেরিটা এ দেশের লোকের কাছে কলকাতা শহরে থেকে গেলে ভাল হত ।’ মোহিতা একটু ভেবে চুপ করে থেকে তার পরে নিশীথকে, পিছনের দেয়ালকে, স্বচ্ছ কাচের মত যেন মনে করে, অনেক দূরের দিকে তাকিয়ে থেকে নিশীথের চোখের ভিতর নিজের চোখ ফিরিয়ে আনল যেন, হঠাৎ কোনো এক সময় বললে, ‘কেন তা সম্ভব হচ্ছে না বুঝতে পেরেছেন হয় তো ? নিশীথ চিন্তিত মুখে বললে, ‘হ্যা পেরেছি, ঘোষ সাহেব যা চাচ্ছেন তা পাচ্ছেন না । কেন তিনি অন্যদের দিয়ে যাবেন যা তারা চাচ্ছে ।” "এই-ই তো কথা । ওঁর মনের কথা এই । এই মনের ভিতরই ঘোষ সাহেবের আত্মস্থতা ।” নিশীথ এক-আধ মিনিট চুপ করে থেকে বললে, ‘টাকাকড়ি তো চাচ্ছেন না ঘোষ ; সেটা আমি বুঝেছি— ‘বলেছিলুম টাকাকড়ি ততটা চান না, মোহিত কী বলবে না-বলবে একটু ইতস্তত করে অবশেষে বলে ফেলল, ‘চান । কিন্তু মান বেশি চান ।” ‘সম্মান তো প্রচুর পাচ্ছেন ঘোষ । পাচ্ছেন, মোহিতা একটু থেমে বললে, সে রকম পাচ্ছেন না, ইউনিভার্সিটি সার্কেলেও—তেমন পাচ্ছেন কই আর I’ ‘নিজের কাজ নিয়ে নিমগ্ন হয়ে থাকবেন নাকি অধ্যাপক সাংসারিক অভাব, অনটন মিটে গেলে ?’ ‘আমি তো তাই ভাবতুম ।’ “আমরাও তো তাই ভাবতাম, অধ্যাপক ঘোষ সম্পর্কে । “তিনি তো আত্মসমাহিত নন।’ ‘আজকালকার পৃথিবীতে সে রকম আত্মসমাধি ফিরে পাওয়া কঠিন । ❖ዕO