থেকে গয়াবাবুরা কলকাতার ব্রাহ্ম সমাজে চলে যান। কলকাতার ব্রাহ্ম সমাজে ঢুকে খুব নাম করেন গয়াবাবু। দোস্ত মহম্মদ লেনে থেকে খুব কঠিন সংগ্রাম করেন দারিদ্রের সঙ্গে । একটি ছেলে, আর একটি মেয়ে হয়েছে তখন । দোর্দণ্ড লড়াই করেন জীবনের সঙ্গে গয়াবাবুরা । সে সব ছেলেমেয়েরা বেশ বড়সড় হয়ে খুব লায়েক হবার আগে মরে গেলেন তিনি আর তার স্ত্রী । বাঙালি কি সত্তর-পচাত্তর বছর বঁাচে না ? না মরে গেলে বালিগঞ্জ প্লেসের এ বাড়িতে এসে কত ভাল লাগত তার । অজয়নাথের গ্রীক-ইহুদি বেীকে দেখে তিনি অখুশি হতেন না, কক্ষনো না । ভারী একটা দামাল আহিলাদে জাক্কর দিয়ে উঠতেন গয়াবাবু। ওঁকে চিনি না আমি ? নিশীথ ঘাড় হেঁট করে নিজের মনে বলে যাচ্ছিল, সোফার ওপর আসন কেটে বসে সাত্ত্বিক সরলপ্রাণীদের মত ভঙ্গিতে । সত্যার্থী আশ্রমে মানুষদের তো এমনি করেই কথা বলতে দেখেছিল নিশীথ । সে ভঙ্গি অনুকরণ করে নি নিশীথ, আশ্রমের সে সব সরল সত্যাগ্রহীদের দেখবার-শোনবার আগে এ রকম চালে সে আরো অনেক কথা বলেছে । নিজেরই একান্ত ধরন সবই তার । গয়াবাবুদের কথা আরো বলতে যাচ্ছিল নিশীথ, জয়নাথের কয়েক বার মোট গলা খাকারি শুনে ঘাড় তুলে প্রিন্সিপ্যালের চোখে বাঘের চোখে কেমন যেন মগডালের ময়ূরের চোখের মত তাকিয়ে রইল সে । ‘তার পর, নিশীথবাবু । কী মনে করে ? খানিকটা লেজ নেড়ে চাপা গজ’ন করে বললে যেন জয়নাথ । ‘আমি জলপাইহাট কলেজে কাজ করছি, ওপরের থেকে বললে যেন ময়ূর। ‘তা জগনি অগমি ।’ ‘কুড়ি-বাইশ বছর কাজ করেছি—সেখানে । ‘জানি আমি, জগনি সব ।’ ‘কলকাতায় এলুম, মফস্বলে এখন আর মন টি’কছে না । ‘কেন, সেটা পাকিস্তান হয়ে গেছে বলে ? ‘না । চার-পাচ বছর ধরেই তো কলকাতার কলেজে কাজের ঘেঁগৎ-ঘগৎ হাতড়ে দেখছি । তখন তো পাকিস্তানের কোনো সম্ভাবনাও ছিল না।’ ‘আগমণর কলেজে কাজ চাচ্ছেন আপনি ?? জয়নাথ বললে । ‘শুনলুম পাকিস্তান থেকে পারানি পাখির বাকের মত ছেলে আসছে আপনার NSS)
পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩০১
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।