পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘দাদা ওপরে চলে গেছেন। এইবারে দরজা বন্ধ করব, সুজয়নাথ বললে । *ই্য যাচ্ছি, নিশীথ বললে । জলপাইহণটি মন্দ লাগছিল না হারীতের । কলকাতায় হগরীতের মন যে-দিকে বুকেছিল সে সব বিপ্লবের, রক্ত-বিপ্লবের কোনো কাজ যে এখানে নেই তা নয়। তবে কোনো দল নেই, এমন কোনো বিশেষ লোককে সে দেখছে না যার কাছে গিয়ে নিজের মনের অণগুনের ওপর আলোর কথাগুলো পড়তে পারে হারীত। কলকাতায়ই হারতের মনটাকে বুঝে দেখবার মত, মতটাকে অনুসরণ করবার মত মানুষ খুব কম ছিল। অনেক কষ্ট করে তাদের খুঁজে বের করতে হয়েছে, কোনো-কোনো জায়গায় বেশ সহজেই যেন হগরীতের বক্তব্যটা বুঝতে পেরেছে তারা, অনেক ক্ষেত্রেই দুঃসাধ্য সাধন করতে হয়েছে হরীতকে —একে, ওকে, তাকে, নিজের কথাটা ধরিয়ে দেবার জন্যে । কাজে অবিশ্যি হয় নি কিছু, কবে কোনো দূর ভবিষ্যতে খুব বৃহৎভাবে কাজ হবে সেই জন্যে অল্প-অল্প ংগঠন চলছিল কলকাতায় । হগরীতের অভাবে কলকাতায় তার হাতে গড়া মানুষগুলোর অবস্থা কী রকম দাড়িয়েছে কে জানে ? ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে হয় তো সব । আজ কাল কেউই অণর দেশের, ঠিক বলতে গেলে মানুষের, খাটি স্বাধীনতা ও শাস্তির জন্যে নতুন করে স্বাৰ্থত্যাগ করতে প্রস্তুত নয় । অনেকেরই মনের ভাব এই যে, স্বাধীনতা পাওয়া হয়ে গেছে, আবার কী, এবার সকলেই সবচেয়ে আগে যে-যকে পারে, পায়ে মাড়িয়ে মুখে রক্ত তুলে, ছুটে আম্বাদ করবে, উপভোগ করবে চারদিককার সাতসুতরোর ভেতর অফুরন্ত ভালুকের মত । কিন্তু সেটা কি কোনো ভাল রাষ্ট্র-ব্যবস্থা হল ? কিন্তু এও তো হচ্ছে না । আমাদের দেশে, আমেরিকায়, হয় তো এ রকম, কিন্তু পৃথিবীর প্রায় অন্য কোনো জায়গায়ই এ টুকু মজা লুটবারও অবসর নেই। বিশৃঙ্খল প্রতুলতায় মরছে না তারা, উচ্ছঙ্খল অত্যাভাবে নিকেশ হয়ে যাচ্ছে । দেখে এসেছে সে কলকাতায়—পশ্চিমবাংলায়—ইণ্ডিয়ান ইউনিয়নে । থামাবে কে এ সব ? মানুষকে বোঝার সোজা পথটা নয় কঠিন, নইলে পথটা দেখিয়ে দেবে কারা ? সত্যিই সুবিচার, তৃপ্তি, শান্তি, স্বাধীনতা এনে দেবে ? জানা যাবে সেই জলপাইহণটিকে, যাকে নিজের আশা-ভরসার পীঠস্থান বানানো সম্ভব নয় Obo