পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হুয়েছে বলে মনে হয় না । রোজই রাতে জ্বর হয় এখনো যদিও, তবুও এ উপসর্গট কমে এসেছে, শরীরে আগের চেয়ে বেশি স্বাদ পাচ্ছে সে । কাল রাতে জ্বর হয় নি । অৰ্চনা যে থার্মোমিটারটা দিয়েছিল বার-বার জিভের গোড়ায় ঠেলে বেশ হুশিয়ার হয়ে দেখে নিয়েছে সেটার টেম্পরেচার কয়েকবার কাল রাতে । জ্বর হয় নি। টিউবারকুলেসিস হয়েছে কি না, এ বিষয়ে নিজের মনে সন্দেহ হয়ে গিয়েছিল তার, নরেন ডাক্তারেরও ; কিন্তু দু-একদিন হল হারীতের মনে হচ্ছে যে টি-বি সত্যিই হয় নি তার ; হয় নি যে এ বিষয়ে তার নিঃসন্দেহ উত্তরোত্তর বেড়ে চলেছে । ভাল লাগছে তার । কথা ভাবতে-ভাবতে ইটিতে-ইটিতে অনেক দূরে চলে গেল সে—লালপুরের -রাস্তার পাশে মস্ত বড় একট; মাঠের কাছে নিরিবিলির দেশে, কাছেই ঘনিয়ে আসছে সুলেখাদের বাড়ি । কৃষ্ণচূড়ার গাছ আগুন জালিয়ে উড়ছে রোদের বোশেখের বাতাসে । এক রাশি বোলত। ভীমরুল মৌমাছি রোদে ঝিকমিক করে জিন পরীদের মত উড়ে বেড়াচ্ছে যেন ; এদেরই রক্তের বিষাক্ত সুধার উষ্ণতা উছলে উঠে যেন অবাধ অঝোর রক্তিম ক্যানাফুলের উজ্জ্বলতায় -সুলেখাদের বাড়ির সামনের অনেকখানি সবুজ ঘাসকে নিবিড় করে রেখেছে । ঃ, কী চমৎকার এই পৃথিবীর বসন্ত ঋতু, গ্রীষ্ম ঋতু, কী চমৎকার ঐ খণ্ড নীলে সাদা মেঘ । বড়-বড় সাদা মেঘ ডাবের জলে মেশানো দুধের উষ্ণতার মত এই রৌদ্রের ভেতর—দুপুর এসে পড়েছে, জমে উঠেছে, দুপুর ফুরিয়ে যাচ্ছে যেন, বিকেল কথা বলছে যেন কৃষ্ণচূড়ার ছায়ার ভিতর। কোনো বেদনা নেই, মানুষের হৃদয়কে সৌরভ দিয়ে মৃত্যুর যে-ধ্বংসকীট রেখে যায়, সময়, থেকে-থেকে তার ছায়ণপাত ছাড়া । শুfড় আছে এই কীটের ; শুঁড় আছে, ছায়া পড়ে । কোনো বেদনা নেই, এই সরস নিঃশবদ বিপদের কালিমা ছাড়া । ‘তুমি যে আসছ আমি দেখছিলুম হারৗত—' ‘আমি ক্যানাফুল দেখছিলুম তোমাদের বাগানের । কী চমৎকার সবুজ ঘাস ঘিরে বোলত-মৌমাছির হুলের জুলুনি-পুড়ুনির ভেতর থেকে ফুটে বেরিয়েছে যেন এই সব ক্যানাফুল—ইস ! কী লাল । ‘রক্ত রঙই ভাল লাগে তোমার হারীত । বিপ্লব করছ।” ‘কোনো রক্ত ঢেলে বিপ্লব না করতে পারলেই তো ভাল । মানুষের ভাল করাই তো উদেশ্ব্য, মানুষকে খুন করা হবে কেন তার জন্যে ? বললে হরীত । •రos