পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*তাই তো দেখছি ।” ‘খুব ভাল পড়াতেন আমাদের, কথাবার্তা তার তোমার চেয়ে নরম ছিল হারীত । ‘তা হবে, তিনি বিদগ্ধ মানুষ, আমি তো’— ‘প্রলেটারিয়েট ? সুলেখা হেমন্ত-শীতের, প্রফেসর সেনের, সেই আশ্চর্য ক্লাসগুলোর কথা ভাবতে-ভাবতে চিন্তিত চোখে হগরীতের দিকে ফিরে তাকাল । ‘না না, তা হলে তো হতই । আমি হচ্ছি, ফরাসীরা যাকে upasle বলে তাই ।” ‘কী করে এত বেশি আত্মভজ হতে পার তুমি, সেইটেই আশ্চর্য । বিশেষত এই যুগে বই পড়ছ না আর, বলছ । চিন্তা-টন্তা করে লাভ নেই, এইটেই তোমার মনের কথা দেখছি তো । এর সুফল তুমি পাচ্ছ—দশ কাহন বিশ্বাস, তোমার নিজের ওপরে । হাড় কালিয়ে দিচ্ছে কিন্তু তোমার বিশ্বাস ।" ‘হাড় কালিয়ে দিচ্ছে আগমণর ? ‘দিচ্ছে ছাড়া আণর কী ? খুব বিচ্ছিরি চেহারা হয়ে গেছে আমার ? সুলেখা ঘাড় কাত করে জানালার ভেতর দিয়ে মাঠের রক্ত ক্যানাগুলোর দিকে তাকিয়েছিল । কিন্তু ক্যানার দাউ-দাউ আগুন তার চোখের মণির ভেতরে মণিকণিকা জ্বাললেও মনে কোনো দাগ কাটছিল না। কী ভাবছিল সুলেখা ? হগরীতের কথা নয় । হগরীতের কথাটা মাটির নীচে পাইপের ভেতর জলের মত তার অজান্তেই যেন কানে ঢুকল তার, জলের মত কোনো দিক দিয়ে কোনো দিকে চলে গেল তার পর, টের পেল না সে । পাইপের মত হয়েছিল মনটা তার । কিছু বলছিলে আমাকে ?’ কী ভাবছিলে তুমি ? ‘দেখছি তো ভেঙে পড়ছে তোমার শরীর ।” ‘অাগের চেয়ে ভাল হচ্ছে জলপাইহাটিতে এসে ।” "ভাল হলেই ভাল, হগরীতের শরীর নিয়ে মাথা ঘামাতে ইচ্ছে করছিল না সুলেখার, বিশ্বাস তোমার দৃঢ় । কিন্তু বিশ্বাসটা কী ? আমাদের দেশে স্বায়ত্ত শাসন কিছু হচ্ছে না, কিছু নেই অণর কংগ্রেসে । ফোপরা হয়ে গেছে কংগ্রেস—এই তো ।”