পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিংশপা সমুদ্রের ঘূর্ণির ভিতর অন্ধকার রাতে ফেনগর গুড়ির মত উড়ছে যেন সে—এই তো এখনই উড়ছে ; মফস্বলের সেই কলেজের কাজ নেই ( ওটা ছেড়ে দেবে সে, না হয় তাকে ছাড়িয়ে দেবে ) কলকাতায় কোনো কাজের জোগাড় নেই, সম্ভাবনা নেই। নিশীথের একটি মেয়ে কোথায় যে, কেউই তা বলতে পারে না, ঘর ছেড়ে গেছে, না হগওয়া হয়ে গেছে এমনিই নিজেকে নিকেশ করে ফেলার জন্ত্যে, না অন্য কেউ সাবড়ে লণশ গুম করে ফেলল—ষোল বছরের চমৎকার নিরপরাধ অসংসারী মেয়েটি—কেউই কোনো খোজ-খবর দিতে পারলে না । অথচ মেয়ে ঘর ছেড়ে গেছে বলে একটা গ্লানি লেগে রয়েছে নিশীথের পরিবারে, মুখে বিশেষ কিছু না-বললেও বলি-বলি চোখ তুলে নিশীথকে আর তার স্ত্রীকে জানিয়ে দিয়ে যায় ব্যাপারটা, যে যখন যে-কোনে? কারণেই কিছুটা বিমুখত বোধ করে, একটু ঠাসবার দরকার বোধ করে নিশীথ আর তার স্ত্রীকে। আর-একটি মেয়ে দেশের বাড়িতে মরছিল ; থাইসিস হয়েছে চু নিশীথ তাকে অনেক হিম্মৎ করে কঁচড়গপাড়ার হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে কলেজের প্রফেসর মহিমবাবুর মারফৎ ; নিজে যেতে পারে নি, নিউমোনিয়া হয়েছিল তখন নিশীথের । বাইশ বছর বয়স নিশীথের ছেলের ; মানুষ হল না । শক্তি ছিল কিন্তু বি-এ পাশ করে অণর পড়ল না, ইয়ারদের সঙ্গেই কাটায় দিনরাত ; চেনস্মোকিং করে ; সিগারেট ছাড়া অন্য কোনো কিছুর ধোয়া ওড়ায় কিনা জানা নেই ; মাঝে-মাঝে অনেক জায়গা থেকে নালিশ এসেছে যদিও, তা হবে ; নিশীথের চোখে পড়েনি । কিন্তু উত্তেজক জলরস যে খায় হরীত, নিশীথ জানে তা । কী করবে ? উপায় নেই । ছেলের ওপর কোনো হাত নেই এখন আর । যথাসময়ে ছিল ; বেশ ঠিক ভাবেই তো । কিন্তু তাতে ছেলে বিগড়ে গেল কেন, বলতে পারে না নিশীথ । তার নিজের পিতৃপুরুষের দিক দিয়ে ( চারপুরুষ অন্তত—যতদূর জানা আছে তার ) বেগড়াবার কোন ইতিহাস নেই । হরীত প্রণয়ই বাড়িতে থাকে না, দেশেই থাকে না । নানা রকম জগতের ইয়ার আগছে তার, নানা চক্রের । কিছুদিন থেকে সে একদলের সঙ্গে কলকাতায় আছে, রেভলুশনের তোড়জোড় করছে কিন্তু কোথায় অাছে জগন৷ নেই । নিশীথের স্ত্রী মফস্বলের বাড়িতে এখন একেবারেই এক ; আবিশ্যি একদিকে কলেজের ফিলজফির লেকচারার মহিম ঘোষণল সপরিবারে থাকে । মহিম ঠিক তত্ত্বগ্রাহী নয়। সাংসারিক পলেস্তারায় খুব সম্ভব ভিতরেও সাত্ত্বিক । Ψ Ο ●