পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিশীথের স্ত্রী সুমন চালিয়ে নিতে পারবে—এই একটা মাস—মহিম ঘোষালের পরিবারকে, অপরূপ সেই অৰ্চিত ঘোষালকে, কাছে-কাছে রেখে। খুব শক্ত এনিমিয়া হয়েছে সুমনার। নিশীথের প্রভিডেণ্ড ফাণ্ডের বাকি সাতশ টাকা খসিয়েছে ; প্রভিডেণ্ড ফাণ্ডে নেই কিছু এখন আর । দেখে এসেছে উকিল প্রকাশ মিত্তিরের ছেলে নরেন ছেলেটা বেশ সুস্থ-সমর্থ, মতি-গতি অবিশ্বি ভালো নয়, খুব সম্ভব সিফিলিস নেই, ডাক্তার মজুমদারের মত স্বচ্ছ ডাক্তারের হাত থেকে বেরিয়ে তবে রক্ত দেওয়া তো . অণরো কেউ-কেউ রক্ত দিতে চেয়েছিল, কিন্তু মজুমদারের পরীক্ষায় টেকেনি । যে-সব কাজে মাদকতা ও অনাছিটি পরের কেবলই অপকণর—মাঝে-মাঝে উপকারও হয়, সে-সব ব্যাপারে নরেনকে পাওয়া যাবে । মফস্বলের বাড়িতে আগুন নেভানো, কলকাতায় এসে হারাউদ্দেশে দমকল লেলিয়ে দেওয়া, বিনা টিকিটে রেলের ফাস্ট ক্লাসে চড়া, যেখানেসেখানে শেকল টেনে-টেনে থামানো, কলেরা-বসন্ত রুগির ডিউটি নেওয়া, চেক জাল করা, টাকা চুরি করা, শহর-গ্রামের ভদ্র-অভদ্র ঘরের ভিত ভাঙা । নরেন দিলদরিয়াই, নারকেলের খুব শক্ত কালো মালায় সিদ্ধির রস, পপটির রস, রক্তের রস, সুমনাকে রক্ত দিচ্ছে। কিন্তু নরেনের নামে বিশেষ বদনাম শুনে এসেছে নিশীথ এবার জলপাইহাটির থেকে । রাণুর ব্যাপারে নরেন দাগি । লোকেরা বলছে । সুমনা দেখতে ভাল ছিল, রোগে-রোগে কিছু নেই যদিও এখন, একটু গা-ঝগড়া দিলেই এখনও কেমন একটা ঝিলিক বেরোয় । নরেনের রক্তে কাজ যে না-হচ্ছে তা নয় । তবে পানিসাস এনিমিয়ার খুব দীর্ঘ পথ—অনেক বাক —নগনারকম ছোবল—প্রতিনিয়তই নির্বিষ নির্মল করে রাখার প্রয়োজন । ডাক্তার মজুমদার ও তার কম্পাউণ্ডারকে টাকা দিরে এসেছে নিশীথ, মহিম ঘোষণল অণর তার গিন্নিকে, দেখবার-শোনবার ভার । কলেজের একটি ছেলে হিতেনকেও বলে এসেছে রোজ গিয়ে খোজ-খবর নিতে। দরকার হলে নিশীথকে লিখে জর্ণনগবে ওরা । জিতেন দাশগুপ্তের হাজার বার-চেণদ টাকায় — টাকার দিক দিয়ে অন্তত চার-পাঁচ বছরের মধ্যে কোনো দুশ্চিন্তা থাকে না নিশীথের । ঝড়ের সমুদ্রে একফোটা পদার্থের মত এই ষে সে ছিটকে-লটকে ফিরছে, তার একটা উপায় হয় । যে-মেয়েটার যক্ষ্মণ হয়েছে, কণচড়াপাড়ার হাসপাতালে আছে—বাচবে না মেয়েটা—তবুও যতদিন বেঁচে থাকে ভানু, তার খরচ পোষাতে পারে, নিশীথ, মাঝে-মাঝে কলকাতার থেকে ২১