পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বুখারিনের কথায় অন্য কথা মনে পড়ে গেল—বিপ্লব করতে গিয়ে একটা মস্ত ট্র্যাপের পাকে জড়িয়ে পড়তে হয় বুঝি মানুষকে সব দেশে সব কালেই ? সুলেখা কথা বলবার আগে মুখটা অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখল এক-আধ মুহূর্ত, তার পর ঘুরিয়ে এনে একটু চুপ থেকে পরে বললে, সব কালেই সব দেশেই । ভারতবর্ষেও তুমি যদি বিপ্লব কর, সবাই যদি বিপ্লবী হয়েও যায়, তা হলেও ওদেরই হাতে তোমার, তোমাদের মত লোকের বিচার হবে । তাতে তুমি টিকে থাকতে পারবে বলে মনে হয় না ।” হারীত আকাশের চিলের ডানার সঙ্গে চোখ ঘুরিয়ে নিয়ে, চোখটাকে স্থির করে আনতে-আনতে বললে, ‘তা হবে খুব সম্ভব । তা আমি জানি । বুখারিনদের ভাগ্যের জন্য আমি প্রস্তুত আছি । ‘তা তো প্রস্তুত আছে । সানগ্রাসের দরকার ?’ ‘না ।” "মেঘ দেখছ তো ।” "মেঘ আগরে জমাট বেঁধেছে ।” ‘সূর্য আছেন মেঘের পেছনে ? মেঘের সামনে তো সূর্য, একটা মস্ত বড় সাদা মেঘের মতন। ‘কে মেঘ, কে সূর্য বুঝতে পারছি না— ‘আকাশের এ-পার ও-পার জুড়ে মেঘট সূর্যের মতন’, বললে হার্যত । "এত জ্বলন্ত ?’ ‘তুমি নিজে উঠে দেখ সুলেখা, হরীত বলে উঠল । ‘আমি তো সূর্য পূজারী নই হার্যত । ‘চোখ বুজিলে যে ? ভেতরে সূর্যটাকে দেখছি । তুমি সানগ্লাস নাও হরীত। হাত বাড়িয়ে চশমাটা সুলেখার হাত থেকে তুলে নিয়ে হাতেই রেখে দিল হারাত ; ক্যানাফুল, কৃষ্ণচূড়া, বোলতা, মৌমাছি, হরিয়াল, ওয়াক, রৌদ্রনীলের দিকে খোলা চোখেই তাকিয়ে রইল সে । এর পরে কলকাতায় গিয়ে বড় মুশকিলে পড়তে হবে, হরীত ভাবছিল । খুব ভাল লাগছিল তার, খুবই খারাপ লাগছিল । সুলেখার কাছে বসে থেকে চোত-বোশেখ বসন্ত ঋতুর এই সুদূর নীলিমার বাতাস, রোদ, পাখি, ছাদ, নিস্তব্ধতার ভেতর—ঘড়ির থেকে ԾՏՑ