পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ফল ওষুধ নিয়ে ভানুকে দেখে আসতে পারা যায়, স্ত্রীকে আনতে পারা যায় কলকাতায় । হয় ত গিডনি ঝগডগ্রামেও পাঠানো যেতে পারে কিছুটা সময়ের জন্যে, নিজেও সে কয়েকটা বছর ইrফ ছেড়ে বসতে পারে—কোনো চাকরি নয়, কিন্তু তবুও টাকা আছে, স্বাধীনতা আছে, মনের স্বস্তি আছে, এমন কোনো ব্যাপারে হাত দিয়ে—ধরো, ইংরেজি-বাংলা প্রবন্ধ লিখে, দরকার হয় গল্প-উপন্যাস লিখে —প্রয়োজন হলে ইংরেজিতে লিখে—ধীরে-সুস্থে সুশৃঙ্খল হয়ে বসবার সময় পায় । ইতিমধ্যে মেয়েট মরে যাবে খুব সম্ভব ; স্ত্রীও মরে যাবে ; কিন্তু তাদের মৃত্যুশয্যাকে খানিকট! স্নিগ্ধ করা যাবে এ টাকা হতে থাকলে—মনে হচ্ছিল নিশীথের । নিজের ছেলেকে—হারী তকে, ফিরে পাবে না বটে কিছুতেই কোনোদিনও অণর, কিন্তু স্বাধীনভাবে যথেষ্ট রোজগায়ের উপায় যদি পাকাপ কি করে নিতে পারে, তাহলে চেনা জানা কয়েকটা দুঃস্থ পরিবারকে দাড় করিয়ে দেবার পক্ষে যথাসাধ্য সাহায্য করতে পfরে সে । চারটে পরিবারের কথা মনে হচ্ছিল তার, কলকাতার বুকের ওপরে বসেই ধনেপ্রাণে মরছে । এরা কি মরে যাবে ? এদের মরতে দেওয়া সহজ । নিশীথ অবিশ্যি এদের খয়রাতির নেশা ধরিয়ে মাথা খেতে যাবে না, কিন্তু সে নিজে যদি শক্ত স্বাধীন হয়ে উঠতে পারে, তাহলে এ পরিবার কটি যাতে ঠিক পথে চলে দণডাতে পারে সে ভাবে ববস্থা করা সহজ হতে পারে—নিশীথের পক্ষে। মফস্বল কলেজটার কাজে নিশীথের ফিরে যাবার কোনো সম্ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। সে কাজটার ওপর—সত্যি বলতে কি —যবনিকা পড়ে গেছে । কলেজের প্রিন্সিপাল আর কলেজের গভনিঙ বড়ির সেক্রেটারি হরিলাল বাবুকে নিশীথ বলেছিল : দেড়শ টাকা মাইনের এ চাকরিতে পোষাচ্ছে না তার, অন্তত দুশ পচিশ-আড়াইশ না করে দিলে কী করে চালাবে সে ? শুনে হরিলীলবাবু আর জি-বির কয়েকজন মেম্বার বলেছিল, আপনার যদি কাজ করবার ইচ্ছে না থাকে করবেন না—কলেজের কাজ ফলারের ইড়ি নয়, এখানে টাকাকড়ির কথা নেই । নিশীথ বলেছিল, ‘বাইশবছর তো হল সে সব ; হয়রান হয়ে পড়েছি । এক মাসের ছুটি নিচ্ছি। দরখাস্ত লিখে দিলাম। কালই—যদি সম্ভব হয় আজ রাতের গাড়িতেই, কলকাতায় যাব । হরিলালবাবুরা বললে, ‘চাইলেই কি ছুটি পাওয়া যায় ? কী গ্রাউনডে ছুটি নিচ্ছেন আপনি ? আপনার তো কোন অসুখ-বিসুখ নেই, আপনার শরীর তো সুস্থ ।" নিশীথ বলেছিল, 'আমার স্ত্রীর এনিমিয়ার জন্যে রক্তের দরকার ९१