পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গিয়ে থেমে গেল অৰ্চনা উচু শিমুল গাছটার উডু-উডু পাতার দিকে তাকিয়ে । বুলবুলি দুটো আবার এসেছে বাতাসের নিরবচ্ছিন্ন প্রাণচারণার বিচরণার সঙ্গে প্রবাহিত হয়ে শিমূল গাছটার ভেতরে । ‘অামি তো—কী ? হগরীত বললে । ‘রোজ দুপুরেই তো সুলেখাদের ওখানে কাটাচ্ছ । ‘সেটা ঠিক । আমার কাজের ক্ষতি হচ্ছে । একটা নিয়মের ভেতরেও আসতে পারছি না”—ঠিক এই জন্যে—অন্য কোনো একটা অব্যক্ত কারণেও, অৰ্চনার মুখোমুখি বসে একটু অস্বস্তি বোধ করে হার্যত বললে । ‘কী কাজ করবে ঠিক করেছ জলপাইহাটিতে ? “তোমাকে তো বলেছি সব । কোনো রিপ্লবের কাজ এখানে হবে না ।” ‘কেন, কাজের ক্ষতি হচ্ছে কেন সুলেখাদের ওখানে গিয়ে ? সুলেখা তো বেশ বড়-সড়—লেখাপড়া জপনা, এবণর তো বি-এ দিচ্ছে । নানা রকম ভাল সহজ মিহি পরামর্শ দিতে পারে সে } হার্যত একটু অবাক হয়ে অৰ্চনার দিকে তাকিয়েই সুমনার দিকে তাকাল, ঘুমিয়ে আছে ; বাইরের পৃথিবীর দিকে তাকাল ; ঘরে ঘুমিয়ে আছে লোক, কথা বলছে লোক, বাইরে অবাধ প্রকৃতি—কী গভীর আহলাদে অপর্যাপ্ত চৈত্রবৈশাখ, বিকেলের শেষ রোদ-বাতাসে, ছিটে মেঘের মত উড়ন্ত শিমুল তুলোয়, বড় তুলোর মত উড়ন্ত ধূসর মেঘে, বাতাসে, আরো আকুল অনাকুল চৌষটি বাতাসে, সাদা কালো পাখির ডানাগুলোকে ছিটকে ফেলে। ভীমরুল উড়িয়ে, উচু-উচু গাছের বনের ভিতর কোথায় হারিয়ে গিয়ে কোথায় চলে গেছে প্রকৃতি, সময় নেই, দেশ নেই, জলপাইহাট নেই এমন এক স্থির নিবিড় সদর্থের ভিতরে তবুও । ‘রোজ যাই না আমি সুলেখার কাছে।’ ‘রোজ যেতে না করে নি তো কেউ তোমাকে । কেন যাবে না হরীত ? হারীতের দিকে তাকিয়ে অর্চনা বললে । ‘তুমি তো যেতে নিষেধ কর না । কিন্তু মা আমাকে তার গা ছুঁয়ে শপথ করতে বলছিল । সুলেখাদের বাড়ি যাই সেটা মা পছন্দ করে না । ‘মায়ের প্রাণ, তাতে হবেই, অর্চনা হাত পাখাটা তুলে নিয়ে আঁচলে বাতাস লাগিয়ে বললে, ‘ঘরের ছেলেকে ঘরেই রাখতে চান তিনি।’ • ΟΦ Ο