পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তা তো হল, হরীত তাকিয়ে দেখল বাইরের পৃথিবীর থেকে আলো যেন কাক, চিল, মৌমাছির পাখা উসকে উড়িয়ে ফালি তরমুজের রঙের মত নিঃশব্দ বর্ণে এক-আধ মুহূর্ত স্থির হয়ে আছে, টনক নড়ছে না, কোনোদিকে ঠিকরাচ্ছে না কিছু, মন্ত্রসিদ্ধির মত যেন নিজেকে ধরে আছে সময় ঃ বিকেলের রোদ নেমে এসে জারুল, হিজল ঝাড়, জামরুলের বনের এই মায়াঘন তবুও সৃষ্টির অস্তিম প্রতিভায় স্বচ্ছ দেশের ভেতর । পাকিস্তান হয়েছে এ দেশ । মানিয়ে নিয়েছে সুলেখারা । তাদের এ জায়গাট ভাল লাগে ।” ‘ভাল লাগে । কিন্তু আগজ হোক, কাল হোক কলকাতায় চলেই যেতে হবে ।’ অর্চনা বললে । ‘কী করে জানলে তুমি ? কী বলে সুলেখা ?

  • সে তো এখানে থাকতে চায় ।” ‘আমিও তো থাকতে চাই । কিন্তু দুটো কি এক রকম ?’ সুমনা ঘুমের মধ্যে কাতরে-কাতরে চুপচাপ হয়ে পড়ছিল আবার । হারাতের চোখের দিকে তাকিয়েছিল অর্চনা, শেষ বিকেলের ছায়ার ভেতর একটা বড় জামফলের নীলিমা, কালিমার মত যেন, অর্চনার চোখের তারায়, অর্চনার সমস্ত সত্তায়, পরিব্যাপ্ত হয়ে, ছায়া-বিকেলের জামবনানীর মত, কোনো এক নিস্তব্ধ নদীর পরের, ছেলেবেলায় সে-সব নদী, ছায়, নীরবতা, জগমের বন দেখেছিল হারীত। তার পর আর দেখে নি অনেক দিন । আছে যে তাও ভুলে গিয়েছিল । যে-জ্ঞান বিদ্যমাত্র, যে-বিদ্যা শুধুই শব্দের ব্যসন, যে-শব্দ বাকপ্রগতি অফুরন্ত বিশৃঙ্খলার সর্বব্যাপ্ত বুদ্ধিনাশের একটা বিরাট বিনাশ প্রস্থানের দিকে টানছে মানুষকে, কলকাতা তাকেই মনে করিয়ে দেয় শুধু ; বলে, দেশ নগর হবে ; নগর হবে কলকাতা ; কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, হারিয়ে যাচ্ছে, তলিয়ে যাচ্ছে, অন্ধকারের রক্তহিমানীর দিকে যাচ্ছে সব ; বলে এইই সভ্যতা, এই উপগ্রহে এইই অন্তিম অবরোহণ মানুষের । হরীত নিজেও নির্জন সন্ধ্যার নদীর পারের শাল, জামরুল, শিশু বনানীর শান্তি, সত্যতা, মহানুভবতাকে স্বীকার করে নি তো, সে কলকাতার মানুষ, সভ্যতার মানুষ, -কলকাতা ভেঙে কলকাতাকে সৃষ্টি করবে আবার, এই বিষ সভ্যতাকে বিনাশ

"○○