পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘কেন, তাদের দেড় লাখ টাকা ব্যাঙ্কে আছে, পার্কসার্কাসে বাড়ি আছে, তাই বুঝি চাওয়া হল না তোমার ? ‘তোমার কিছু নেই । তোমার কাছে তে চেয়েছি । আমাকে যদি থাকতে বল এখানে তোমার মৃত্যু পর্যন্ত, তা হলে এ রকম চাইতে হবে অনেক বার আমায় । তা নয় তো, সুলেখার কাছে টাকা চেয়ে, তোমার কাছে রাতে-রাতে নিরিবিলি বৃত্তান্ত বর্ণনা করে, তোমার মৃত্যু পর্যন্ত পঁচিশটা বছর কাটিয়ে দিতে হবে জলপাইহাটতে আমার ?’ অর্চনা ঘুমোচ্ছিল, জেগে ঘুমোচ্ছিল, ঘুমিয়ে জাগছিল—আধা শোয়া অবস্থায় । তেমনি ভাবেই জামরুল বন, জাম বন পেরিয়ে গেল তার চোখ ; কোথাও লগ্ন হল না—দূর থেকে—দূরতার দিকে—আকাশ নয়—শূন্য নয়—কেউ থামাতে পারে না তাকে । তবুও ঘুমের ভিতর ককিয়ে ওঠে সুমনা, খেপে যায় । সুমিঘে পড়ে ত্যাবার । অর্চনার দিকে তাকিয়ে আছে হরীত । কী করে টের পেল অর্চনা, সে তো এ সব সময় পেরিয়ে চলে গিয়েছিল স্রোতের ভেতর—সৃষ্টির সনাতন সময়ের । উঠে বসল অর্চনা । ‘আমার ঘুম একেবারে ভেঙে গেছে, অর্চনা বললে, “এই রাতের বেলা বেশ ঘুম আসে । খোকা আর উনি ফিরেছেন টের পেয়েছ ?” ‘ন তো । কোথায় গেছেন মহিমবাবু ? ‘কলেঞ্জের ছেলেরা একটা থিয়েটার করছে । রাত দশটার অাগে ফিরবেন না হয় তো । এখন কটা রাত ? ‘সাতটা হয় তে। । কলেজে থিয়েটার হচ্ছে । অবনী খাস্তগিরের লেকচার আছে মতিজেদ হলে । রাত-বিরেতে সাহাপটির থেকে চামারপট্টি, চামারপটি থেকে সাহাপট্টি, পায়ে হেঁটে মেরে দিতে হচ্ছে আমাকে । বাইরের দিকে তীকালে মনে হয় মফস্বল শহরটা যেন চিতে নিবিয়ে খেংড়াখেংড়ির শ্মশানে খুবড়ি খেয়ে পড়ে আছে রাত দুপুরে । কিন্তু তবুও বেশ জম-জম করছে, বেশ মরে বেঁচে অাছে টাউনটা, যাই বল তুমি অর্চনা । মরতে-মরতেও যে-জিনিস মরে না সেটাকে খুব ভাল লাগে আমার, খুব ভাল লাগে বাচাতে সে জিনিসকে —আশার আলোয় লক্ষ্মীমন্ত করে তুলতে । উনি আর আমি কলকাতায় চলে যাব, মাথায় ঢুকেছে তোমার ?