পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাত্বিক ঃ ভাবতে-ভাবতে দেবতাদের থেকে অনেক দূরে গড়িয়ে সত্যিই বেশ সেঁটে-সাপটে রাক্ষসের খোরাক খেয়ে ফেলল যেন সে । হারীত তার ক্যাম্প খাটে তার বাবার ঘরে গিয়ে শুল—দরজা-জানালা খুলে দিয়ে এক দিককার এই বোশেখ দুপুরে পৃথিবীর নিরবচ্ছিন্ন স্বৰ্গচারী বাতাসের ভেতর । একেবারে পাচটার সময় ঘুমের থেকে উঠে—কেমন অসাড় অনিঃশেষ ঘুম পেয়ে বসেছিল তাকে, নড়ে নি চড়ে নি, একবারও ঘুম ভাঙে নি, স্বপ্ন দেখে নি কিছু, কোনো অভাব-অণক্ষেপ, ব্যথা-খি'চ অনুভব করে নি ঘুমন্ত শরীর তার—পাচটার সময় ঘুম থেকে উঠে, হরীত তাকিয়ে দেখল, ক্যাম্প খাটের কাছেই তার বাবার কাঠের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে, বা পায়ের ওপর জয়পুরী চটি মোড়া ডান পা চড়িয়ে দিয়ে, একটা খবরের কাগজে চোখ বুলিয়ে চলেছে জুলেখা । জুলেখা ? কখন এসেছে ? জুলেখা, তাদের বাড়িতে ? হারীত চোখ রগড়াতে-রগড়াতে ভাল করে তাকিয়ে দেখছিল ; হারতের যে ঘুম ভেঙেছে টের পায় নি জুলেখা । হারতের খাট থেকে হাত-তিনচার দূরে ক্যাম্প খাটের সঙ্গে আড়াআড়ি ভাবে বসে আছে । মুখের পাশের দিকটা দেখা যাচ্ছে তার ; খাড়া নাক আরো খাড়া মনে হচ্ছে ; খোপা দেখা যাচ্ছে ; মুখের সামনেট দেখা যাচ্ছে না । জুলেখা ঘুরে না বসলে হারাতের সঙ্গে চোখাচোথি হয় না। নিশীথবাবু তো জুলেখাদের মাস্টার ছিলেন, কিন্তু তার আমলেও দু-চার দিনের বেশি এ বাড়িতে আসে নি জুলেখারা । অবিশ্ব্যি কয়েক বছর এখানে ছিল না হারীত। তখন কী রকম এসেছে না এসেছে জানে না সে । আসে নি হয়তো, আসেই নি । আজ হঠাৎ এ রকম এসে পড়েছে যে সে ? কী করবে হরীত ? ঘুমের নিকেশ হয় নি তার—আরো ঘুম চাইছে শরীর। ঘুমোবে ? পাশে এক জন বিশেষ দরকার নিয়ে বসে আছে বলে ঘুম যদি না আসে হারীতের চোখে, তা হলে মটকা মেরে পড়ে থাকবে ? জুলেখা যেন খবরের কাগজ পড়তেপড়তে একটু আলতো ঝাকুনি দিয়ে হারাতের দিকে মুখ ফেরাবার উপক্রম করল, অমনি চোখ বুজে ফেলল হারীত। চোখ বুজে সে ভাবছিল, বড় অতিথি এসেছে তার ঘরে অথচ কাছে তার কেউ নেই, সুমনা নেই, অর্চনা নেই ; সামান্য একটু সৌজন্য দেখাবার জন্যেও ওরা কেউ আসতে পারল না এ ঘরে, কাছে এসে বসতে পারল না ওর—ভাবতে-ভাবতে চোখ মেলে হরীত ԾԳ Տ