পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জুলেখা আলোড়িত মুখে হারাতের দিকে তাকাল, খুব আন্তরিকতা না থাকলে মানুষের মুখ, চোখ, মূল্যবিনাশের চেতনায় নিপীড়িত হয়েও এ রকম স্পষ্ট, স্নিগ্ধ দেখায় না, মনে হচ্ছিল হগরীতের । ঠিকই বলেছ জুলেখা, এ শতাব্দীটী ব্যাধিতে ভরে আছে, মানুষ কী করে সুস্থ থাকবে । কিন্তু তোমাদের মাস্টারমশাই স্ট্রেচারে বেড়াচ্ছেন মনে হয় না ; সমুদ্রে শোয়া অভ্যাস আছে, সম্প্রতি শিশিরে শুয়েছেন। স্ত্রীকে ছেড়ে চলে গেছেন বলে মনে হয় না । তোমাদের জলপাইহণটি কলেজটাই ওঁকে মেরেছে ; ভেতরের খবর সুলেখার কাছে জিজ্ঞেস কোরো । যে মানুষ আজীবন দর্শনের মত করে, তার চেয়েও বেশি ধর্মের মত করে একটা কলেজ সংস্থান নিয়ে কাটাল সেটা যে বাস্তবিকই কোনো সত্য দর্শন প্রস্থান নয়, তাতে ঠাণ্ডা থাকে না, মনের খাদ্য নেই, পেটের খোরাকও পাওয়া যায় না, মনের চেয়ে পেটের দাবিই বেশি হয়ে ওঠে, এত যে মানুষ কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে, এই সব অধঃপতনের থেকে সরে পড়বার জন্য তিনি চলে গেছেন, মাকে—ডাক্তার-আচর্ণনামহিমবাবুর কাছে রেখে গেছেন ; ঠিক ফেলে গেছেন বলতে পারা যায় না । পর দিনও জুলেখা এল । কথণয়-কথায় নিশীথের কথা এসেছে অণবীর । জুলেখার দিকে তাকিয়ে হরীত বললে, বলতেও পার নিশীথবাবু তার স্ত্রীকে ফেলে চলে গেছেন। আজীবন গোলকধাধায় ঘুরে তার পর যখন সত্যি একটা বেরুবার পথ খুঁজে পাওয়া গেল তখন তিনি তাজব কাণ্ডই করলেন, বেরিয়েই গেলেন দেশ থেকে, কলেজ থেকে, স্ত্রীর কাছ থেকে। বেরুবার পথ খুঁজে পেলেও অনেকে তো গোলকধাঁধায় ঢোকে আবার, হরীত জুলেখার দিকে ভাল করে তাকিয়ে বললে, কিন্তু সেনমশাই বাজকুডুলের মত দক্ষিণ সমুদ্রের দিকে চলে গেলেন ।” "তার মানে ?” ‘মানে জীবনের একশটা বছর কেটে গেছে তার । ফুরিয়ে গেছে—ব্যস।” ‘র্তার স্ত্রীও কি গোলকধাঁধার মতন ছিল ?’ "তাই তো মনে হচ্ছে ।’ বাপকে সাফাই করবার জন্যে বলছ তুঝি ? 'না, আমি জেনেই বলছি, আমি তো তার স্ত্রীর ছেলে ।” טOG\