পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

‘ও-রকম অধীর হয়ে তুমি কথা বলছ, একটু থেমে থাক, ভাল করে ভেবে দেখ,” আস্তে-আস্তে বললে হরীত। জুলেখার দিকে মুখ ফিরিয়ে চোখ বুজতে গিয়ে, মেলে দিয়ে, মাথা নাড়তে গিয়ে অনড় হয়ে থেকে তবু হরীত বললে, ‘মাকে চিনেছি আমি । কিন্তু চিনে ফেলে বুঝতে পেরেছি যে তার জীবনে যে-রকম বিপত্তি এসেছে আগমণর জীবনে তা তো অণসে নি ।” ‘কেন, তোমার জীবনেই তো বেশি সঙ্কট ।” ‘কী করে জুলেখা ? হারীত ঘরের ভেতর পায়চারি করতে-করতে বললে । তার পর ঘাড় হেঁট করে দু-চার পা এগিয়ে দূরে একটা জানালার গরীদের কাছে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে বললে, ‘আমি তো আমার সঙ্কটে তোমার অমূল্য পরামর্শ পাচ্ছি, আচনি কী পাচ্ছে ? 'আমার অমূল্য জিনিস নিয়ে আমি তোমাদের বাড়ি ঢোকবার আগে নিশীথবাবুকে চিঠি লিখেছে তো অচনা । জান না তুমি ? ই্যা, সব চিঠিই পাশ করে দিই আমি । কিন্তু এটা ধরা পড়ে নি, হরীত চোয়ালের থেকে হাতের মুঠে। সরিয়ে নিয়ে আস্তে-আস্তে বললে, "কী লিখেছে ? লিখেছে হরীতকে নিয়ে পারছি না আমি আর, তুমি এসে একটা ব্যবস্থা করেণ । ’ হfরীত ঘাড় হেঁট করে পয়চারি করতে-করতে এক জায়গায় থেমে দাড়িয়ে মুখ তুলে বাইরের উড়ন্ত পাখিদের সাদা-কাল-খয়েরি-খইরঙা ডানাগুলোর দিকে অবহিত হয়ে থেকে অনেকটা সময় কেটে গেলে ঘরের বেশি আবছায়ার ভেতর জুলেখার খাড়া নাকটাকে প্রথম দেখতে পেয়ে তার চোখের দিকে তাকগল তারপর । 'অচfনার সঙ্কট হচ্ছে এই যে নিজের দায়ে সে তো আগসে নি, তা সে অগসতও না কোনোদিন, হয় তো নিশীথবাবুর দিকে তেমনি ভাবে গিয়েছিল, কিন্তু আমি তাকে আমার দিকে তড়িয়ে এনেছি, কলকাতার থেকে এসে কেমন অব্যবস্থিত হয়ে ছিল জীবন যেন । সে পরে সাড়া দিয়েছে ; বেশি সাড়া দিচ্ছে এখন । কিন্তু ঠিকই বলেছ—তৃতীয় পাণ্ডবের দ্রৌপদীই সে ; তাদের জন্যে তৈরি হতে-হতে অর্চনার যখন উপচে উঠবার সময় তখন তারা কেউ নেই, আমি, দৈবক্রমে উপস্থিত ।” \9:0