পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেখাচ্ছিল, ভেবে ছিলাম সন্ধে হয়ে গেছে, বাতি জ্বালবার কথা বলছিলাম । মেঘগুলো সরে গেছে। বাইরে আলো কী রকম দেখেছ জুলেখা ? “ঘরের ভেতরেও তো আগলে । এ আলো নিভে যাবে শীগগিরই । বোলতাগুলো কোথায় চলে গেল |’ বোলতাগুলো কোথায় চলে গেল খুঁজছিল দু-জনে ; কোথাও নেই বোলতা, বাতাস নেই ; ছায়া জমছে । এতক্ষণ অণকণশ ছিল চার দিক ঘিরে । আকাশ মুছে যাচ্ছে । তার পর নেমে এসেছে আকাশ—সময়ের দেয়াল—যেন অনবরত দেয়াল ও অবাধ পরিসরের ভেতর দু-জনকে নিবিষ্ট করে রেখে । এইবার অন্ধকার হচ্ছে। মৌমাছিরা উড়ে যাচ্ছে। কিন্তু মধু নিয়ে চলে গেল, ওরাই তো মৌচাক সৃষ্টি করবে। আজ কাল যে সব স্টেট গড়ছি আমরা, উড়িয়ে দিচ্ছি, তার চেয়ে বেশ স্নিগ্ধ, পরিষ্কার। বেশ প্রিয় জিনিস মানুষের জ্ঞানের চেয়ে প্রকৃতির সফলতা, সাধ বেশি উজ্জ্বল হল তো— ‘কোথায় উড়ে গেছে মৌমাছিরা ?’ ‘কালো মেঘ নেই কোথাও আর । কিন্তু তবুও অন্ধকার হয়ে আসছে।’ “এইবারে সন্ধে হল । বাতি জ্বালানো হবে ?’ ‘কোথায় হ্যারিকেন তোমার ? তোমার মার ঘরে ? দরজা খুলে নিয়ে আসি আমি হারীত ।” “থাক, খুলো না দরজা, বন্ধ থাক । 'না, এখন আর আটকানো থাকবে না, আমি খুব একটা নিস্তার বোধ করছি । খুব ভাল লাগছে আমার ।" জুলেখা বাতি জ্বালিয়ে নিয়ে এল। আমাদের পৃথিবীতে অনেক দিন আগে, অনেক সাগর ঘুরে তার পর সমুদ্র প্রবাসীদের জাহাজ অন্ধকারে ধর্মীশোকের নির্জন চক্রস্নিগ্ধ সৈকতে—ঢের দূরে প্যালেস্টাইনের পাশে স্বাতী পুনর্বসু নক্ষত্রের নীচে এসে থামত । রাতের বাতাসের ভেতর বসে থেকে তেমনি একটা আশ্চর্য শান্তি অনুভব করছিল হারীত । কিন্তু তাই বলে হারাত অতীত পৃথিবীর মানুষ নয়—আজকের পৃথিবীর অশান্তি ও অপশান্তির চেয়ে আগেকার পৃথিবীর কোনো-কোনো সময়ের শান্তি অনেক ভাল হলেও প্রবীণোত্তর কল্যাণ ও শাস্তির মর্ম পাওয়া যায় কি না, ভাবছিল সে নিজের, নিকট সাময়িক পৃথিবীর জন্যে । 19్సరి