পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হসপিটাল ; এখানে বেড খালি নেই। ভানু ? সে তে কঁাচড়াপাড়ার হাসপাতালে—সে তো মরে গেছে কাল রাতে । খড়মড়িয়ে জেগে উঠল নিশীথ । কোথায় সে ? জলপাইহাটতে ? লামডিঙে নেমে ট্রেন ধরেছে যাবার। না ওয়েটিং রুমে শুয়ে আছে ? জলপাইহাটিতে ? সুমন কোথায় ? নরেন রক্ত দিয়েছিল আগজ ? ওঃ, শহর কলকাতায়, লেক রোডে জিতেন দাশগুপ্তের বাড়িতে বুঝি ? ভোর হয়ে গেছে । ভোর হয়ে গেছে । জিতেন অফিসে চলে গেছে নিশ্চয় । ওর স্ত্রী ঘুমুচ্ছে হয় তো ওপরে । কোথাও কোনো সাড়শশবদ নেই তো । কী হবে এখন জেগে উঠে । জিতেন ফিরুক । কিন্তু বণরটণর আগে ফিরবে কি জিতেন । কিন্তু ফিরুক জিতেন। কিন্তু দুপুরের আগে ফিরবে না তো । কিন্তু না ফিরলে কী করতে পারে নিশীথ ? কোথায় যাবে সে ? দেখা করবার মত লোকজন অণ স্ত্রীয়স্বজন বন্ধু আছে কিছু কলকাতায় । মনটা কঠিন হতে থাকলে সংখ্যায় কমে যায় এরা, মনটা নরম হতে থাকলে বেড়ে যায় । কিন্তু মন যখন নরম কঠিন কিছুই নয়—শূন্য আচ্ছন্ন—তখন একটি বা অনেক শূন্যকে অনেক অস্তি দিয়ে পূরণ করে পূরণফলের অফুরন্ত নাস্তিকে কী দিয়ে ধ্বংস করবে মানুষ ? কে আশ্বাস দেবে, সাহায্য করবে, বাস্তব সফলতার নিটোল নিপট ক্ষম তা দিয়ে ংস করতে দিতে, ভাবছিল নিশীথ । ওপরে খাবার ঘরে ডিম খুজিছিল জিতেন । ডিশগুলো ঘেষে ঘেষে নুয়ে, নিছিয়ে, হেদিয়ে, গা ঝাড়া দিয়ে ব্যাপারটা বুঝে দেখতে চেষ্টা করছিল । ডিশের গায়ে এসব হলুদ দাগ কিসের ? গেরুয়া বাদামি বাসন্তী লাল রঙের কিসের পোচড় এসব ঃ ডোরা ফুটকি ? লোকটা দু হাজার টাকা মাইনে পায়, আরো দু হাজার কুড়িয়ে নেয় পরামর্শ দিয়ে। কিছুক্ষণ চোখ বুলিয়ে বুঝে নিল ব্যাপারটা ; কিন্তু সে যে বুঝেছে কে তা বুঝবে ? ঠাণ্ডা চোখে নিঃসন্দেহে মেজাজ নীরবতার। জানে সব । বুঝেছে, নিশীথ ঘুমিয়ে পড়েছে আবার । অফিসে যাবার মুখে নিশীথকে দেখে গেল জিতেন ; বললে ঃ খুব আরামে ঘুমুচ্ছে নিশীথ । কে যেন সিড়ির কিনগরে দাড়িয়ে বলছে ঃ আপনার ঘুম ভাঙলে ওপরে আসুন । ঘুম তখনো ভাঙে নি নিশীথের। আধা ঘুমের ভিতরেই কথা বলছিল, কে যেন অব্যক্ত শীর্ষ থেকে বলছে ঃ আপনার কি ঘুম ভেঙেছে ? ९br