পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রেখেছে ; এ মেয়েটির সমস্ত ভালবাসার ভিতর দিয়েই পরিমাণবোধ জিনিসটা বেশ তীক্ষভাবে, তাজ হয়ে, চলে এসেছে ; এক-এক সময়ে এর মাত্রাজ্ঞানের অন্যায় কঠোরতীয় কষ্ট পেয়ে মনে হয়েছে—বাস্তবিক এ ভালবাসে কি ? ভালবাসে, ভালবাসে বটে, কিন্তু নিজের শরীরটাকে কোনো দিন প্রমথকে ছু"তেও দিল না সে, প্রমথর বিয়েও সেই ঢের অাগেই ঘটাতে পারলে ঘটাত— এখন ঘটছে যে সেই জন্য কল্যাণীই সবচেয়ে প্রসন্ন, নিজেও কল্যাণী সুবিধে পেলে আইবুড়ো হয়ে পড়ে থাকবে না যে এও প্রমথের কাছ থেকে গোপন রাখবার কোনো প্রয়োজন কোনো দিনই সে বোধ করে নি । কল্যাণীর জীবনের এই তিনটি জিনিসকে প্রমথের স্বীকার করে নিতে হয়েছে— ওদের ভালবাসার সেই গোড়ীর সময়ের থেকেই প্রণয় । বড় অদ্ভুত, বড় তামাসারই তিনটি জিনিস ; ভালবাসা ঐ জীবনের সজাগ পরিমাপ দিয়ে খুব নিখুত করে গড়া । কল্যাণীর এ ভালবাসাকে কোনো বিচক্ষণ মানুষ একদিনের বেশি সইত না, প্রমথও পারত না । অবোধ নয় প্রমথ, অনভিজ্ঞ নয়, অস্বাভাবিকতা অসাড়তা তিলমাত্র নেই তার ভিতর—জীবনের রগড় ও রসের প্রবল অণকাজক্ষ একটি ফড়িং কীটের চেয়েও বেশি নয় তার, একটি নক্ষত্রের চেয়েও কম নয়— কিন্তু তবুও তো বেঁধে রেখেছে । জীবনের কোনো স্থূল স্বাদই মেটাতে পারে নি কল্যাণী—কিন্তু চিন্তা ও ও কল্পনার ভিতরে কোনো অনুভূতিকেই জাগাতে সে বাকি রাখে নি; নিজের শরীরটাকে ব্যবহারে না লাগিয়েও শরীরের অণস্বৰ্গদেরও অনির্বচনীয় প্রয়োজন যে-প্রেমিকের—বুঝতে দিয়েছে তা ; সমস্ত পৃথিবীর ভিতর প্রেমিক যে এক জনেরই নাক-মুখ-ঠোট-চুল চায়—পৃথিবীর বাকি সমস্ত নারীসৌন্দর্য বা লাম্পট্য তার কাছে যে অত্যন্ত কদৰ্য কুৎসিত নিরর্থক, বুঝতে দিয়েছে তা । து এই বোধের ভিতর নিরাশ্রয় ব্যথা—অপরিমেয় অমৃত । বিয়েবাড়ির সমস্ত ফ্যাসাদ-ঝঞ্ঝাট ফেলে রেখে কল্যাণীর সঙ্গে দোতলার একটা নিরিবিলি কোঠায় দুপুর বেলাটা তাই একটু গল্প করতে এসেছিল প্রমথ । বেদনা পাচ্ছিল, আনন্দ পাচ্ছিল । জীবনের সাত-আটটা বিচ্ছিন্ন, ইতস্তত ছড়ানো বছরের জিনিসগুলোকে কুড়িয়ে এনে এক-একটা মুহূর্তের মধ্যে 8O8