পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ভরে পাচ্ছিল যেন সে । এ সবের দরকার রয়েছে—মর্মান্তিক প্রয়োজন আজ ; একটা নিদারুণ কদাকার হাতির শু-ড়ের মত জীবনের ভবিষ্যতের গতিবিধিটা প্রতি মুহূর্তই যেন মাথার ওপরে দুলছে—কোথায় তাকে ছিটকে ফেলে দেয়, কল্যাণীকেই বা কোথায় ? কে কাকে কোথায় খুজে পাবে তার পর— জীবনের কুয়াশাবাতাসে দুজনেই হয় তো বিপরীত দিকে চলতে থাকবে অনন্ত কাল ধরে—কেউ যে কাউকে পাচ্ছে না এই বোধও একদিন থাকবে না এদের অণর—এবং তাইতেই পরিতৃপ্তি থাকবে— । এই ভালবাসাটার দিক দিয়ে— তার নিজেরই অপরিহার্য নিয়মে এদের দুজনার জীবন এমন স্বাভাবিক ভাবেই অজ্ঞান হয়ে থাকবে এক দিন । এবং তাতে বেদন তো দূরের কথা, কারুরই কোনো অসুবিধাও হবে না। জীবনকে বরং ধন্যবাদই দেবে প্রমথও—মানুষকে সে এত স্থির হতে দিল বলে। কিংবা ধন্যবাদ দিতেও ভুলে যাবে হয় তো, নিজের সুস্থিরতা নিয়ে এতই আবিষ্ট হয়ে পড়বে সে । কিন্তু সে সব ঢের দূরের কথা । কল্যাণী এখনও শূন্যতা নয়, কুয়াশাও নয়—পরিপূর্ণ মেয়েমানুষ। শুভেন্দু বরং এখন এখানে না এলেই পারত । এই লোকটার মোটা কণগুজ্ঞানের মেদ প্রমথকে • • • কিন্তু কল্যাণী একে অত ভদ্রতা করে ডাকতেই বা গেল কেন ? ডেকে আনিল তো, বসিয়েই বা রাখছে কেন ? কিংবা প্রমথর কাছে যা এত প্রয়োজনের, কল্যাণী তার বিশেষ কোনো দরকারই বোধ করছে না হয় তো ; নিজেদের ভালবাসাকে—জীবনকে সে আর-কিছু মনে করে বসে রয়েছে ; কল্পনার একটা আজগুবি কিছু । নিরর্থকতায় বিরক্তিতে জ্বালায় শুভেন্দুর আপাদমস্তকের দিকে তাকাচ্ছে প্রমথ । কিন্তু এই লোকটা থাকবেই। কল্যাণীও তাতে অস্বস্তি বোধ করছে না । যেন জীবনের শেষ প্রয়োজনের শেষ রাত্রির নিভৃত মুহূর্তের কোনো গোপনত নেই,—সেই মুহূর্তই নেই—সেই রাত্রিই নেই—সে-সবের কোনো প্রয়োজনই কারু কোথাও থাকতে পারে না যেন ; মানুষের জীবনের পাঠ এর একেবারেই অন্য রকম—ছেলেমানুষির টোকা দুধের গন্ধে মর্মান্তিক । কিন্তু তবুও উঠতে পারা যাচ্ছে না। 8Q6: