পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ছি*ড়ে, গালের মাংস খেয়ে হয়, তো এর দুর্লভ শরীরটাকে অত্যন্ত অবহেলার সঙ্গে যদেচ্ছাক্রমে ব্যবহার করেও, এই মেয়েটির সবিশেষ ভদ্রতাবোধকে যে না পারছে বিন্দুমাত্র আঘাত করতে, না হচ্ছে একটুও কলঙ্কিত ব্যথিত, এই মেয়েটির শরীরের উপরও এমন অব্যাহত অধিকার যার, হায়, এর দেহের তুচ্ছাতিতুচ্ছ একটি রোমের রস উপলব্ধি করবার ক্ষমতাও তবু যার নাই । বিধাতা এমনই অপ্রাৰ্থিত জায়গায় গিয়ে কি তার সুধার ভাণ্ড ভাঙেন ? এক মুহূর্তের জন্য একটু তামাসা বোধ হচ্ছে প্রমথের । কিন্তু দিদির জামাইয়ের জায়গায়, নিজের জামাই যখন এর আণসবে—ভাবতে গিয়েই প্রবল একটা কুম্ভীপাকের বেদনায় ঘুরপাক খাচ্ছে যেন প্রমথ । স্বামীর সম্ভাবনা নিয়ে যে-কেউ আসবে নির্বিবাদে তো কল্যাণী তাকে দিয়ে দেবে, হয় তো সে এ শরীরের প্রতি এক মুহুর্তেরও লোভ না করতেই ; কিন্তু জীবনের ছ-সাতটা মূল্যবান বছরের দিন গুনে-গুনে যত আকাঙ্ক্ষা-কামনার বিলাস, কুহকের সূক্ষ্মতা (কল্যাণীর শরীরের দিকটাই যদি ধরা যায় শুধু ), ওর জন্য জমিয়েছে প্রমথ, সমস্তই নিজের রক্তটাকে বৃদ্ধ করে ফেলছে তার, যৌবনটাকে অকৰ্মণ্য, জীবনটাকে নিরর্থক, আত্মাকে দিয়ে অপচয় করাচ্ছে শুধু, মাকড়সার পেটের নরম রোমের রাশ দিয়ে কুড়িটাকে গেলাচ্ছে শুধু, যে কুড়িটা মৌমাছিকে পেত, ফড়িঙকে, প্রজাপতিকে, আলোকে, আকাশকে। এই মেয়েটার সমস্ত মুসৃণ সুন্দর শরীরটাকে কবে সে মাকড়সার পেটের চটচটে সুতোর গুটিপাকানো ডিম মাত্র মনে করতে পারবে—তেমনই দুবৃত্তি, অশ্লীল, কদর্য, বীভৎস ! এখনো যে এর মোহ, মোহই বা বলে কেন প্রমথ, ধর্মের মত এর মাদকতা, দেবতার মত পবিত্রতা, ভগবানের রাজ্যের মত অনির্বচনীয়তা তার, প্রমথকে কল্যাণীর দেহ ধর্মোন্মত্ত করে তুলেছে ? ওর আত্মা কি ওর শরীরের চেয়েও পূজ্য ? কে বলে, এই সুন্দরকে দেখে নি সে তা হলে ! এর মুখের ওপর, ভুরুর ওপর, ঠোঁটের ওপর প্রমথ তার চোখের দৃষ্টিটাকে আবেগপ্রবণ চুমোর মত চেপে দিয়ে কতবার বলেছে প্রেম, সুন্দরের থেকে শরীরকে কী করে ছাড়াবে ? পৃথিবীর কোথায় কী হয় জানে না প্রমথ, কিন্তু কল্যাণীর সুন্দরী শরীরই ওর আত্মা, ওর মন, ওর অনুপম মোহের সৌন্দর্য দিয়ে গড়া, ভগবান, তাই দিয়েই গড় শুধু, বিধাতা, পৃথিবীর এই একমাত্র মেয়েমানুষকে ՑՏՕ