পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সে ভালবাসার পথের যাত্রী—বাস্তবিক জীবনে যে-মেয়েটির সঙ্গে সঙ্গম এত কম, যে মেয়েটি আজীবন বিদেশের প্রদেশে-প্রদেশেই কাটাল শুধু, কাটাবে শুধু, হাতের কাছে পেয়ে তাকে পাচগল করতে ভাল লাগে না, এর রূপের কথা শোনাতে ইচ্ছে করে একে, মানুষের জীবনে রূপের স্থান কোথায়, ভালবাসার সঙ্গে রূপের কী যোগ, নিতান্ত শরীরেরই বা কতটুকু ; ভালবাসার পথের পরিপূর্ণ অর্থটুকু কী, বাস্তবিক প্রেম কী-ই যে, এর সূচনা কোথায়, পরিণামই বা কতদূর, কোথায়ই বা ব্যথা তার, তার ঈর্ষা, হিংসা তার, তার শ্লেষ, দৌরাত্ম্য, স্বরাচার, মাদকতা, উল্লাস, অমৃত, তারপর কুয়াশা, তার শীত, তার মৃত্যু । জীবনের পরিবর্তনের অবশ্যম্ভাবিতা নিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করে ! পরিবর্তনকে ভয় পায় কল্যাণী, এক-এক সময় কৌতুহল দিয়ে ধারণা করতে চায়—পরিবর্তনকে ও স্বীকার করে না, প্রমথের সন্দেহ ওকে কষ্ট দেয়, প্রমথের অবিশ্বাস, অশ্রদ্ধা, পরিবর্তন সম্বন্ধে হৃদয়হীন অতিচার, ওর কাছে বর্বরতা মনে হয় ; মুখে কিছু বলে না সে, কিন্তু প্রমথের সমস্ত মতামতের পরেও কল্যাণী তার একটি সত্যকেও ক্ষুন্ন করে বুঝে দেখতে কষ্ট পায়, কিন্তু তবুও সেই ফ্রকপরা খুকির থেকে আজ এই আঠার বছরের মেয়ের জীবনের যেএকটা গোপন ব্যবধান টের পাচ্ছে প্রমথ—তারই কুয়াশার নীচে-নীচে প্রমথের ইতস্তত ছড়ানো চিঠি ও কথার ছেড়া টুকরোগুলো জীবনের অঙ্কুর পেয়ে ফুড়ে উঠছে যেন, ওর মনকে আঘাত করে অনাবিষ্কৃত বিস্ময়ের মত তারই একএকটা চমক অনুভব করতে এত লাগে প্রমথের । কিন্তু তবুও অন্য কারো জন্য ওকে তৈরি করে দিয়ে গেল শুধু প্রমথ । ফসল যেদিন আসবে সে দিন চাষীকে আণর পাবে না কল্যাণী ; যে [ ? ] আসবে কে জানে, সে এই সোনাকে কী রকম ভাবে উপভোগ করবে ; এগুলোকে আঁটিমাত্র মনে করবে, না রং, না রস, না অনুভূতি ? ইদুর পেঁচা পঙ্গপাল গাড়ল শুয়ার মানুষ—জীবনের সঞ্চিত সোনার ছড়ার বিস্তৃত মানে এদের কাছ । শুভেন্দু সাদাসিধে পাচলি নিয়ে বসেছে। মেয়েটাকে তার দুর্বল জায়গায় হাত বুলিয়ে আটকে রাখছে। প্রমথও পাল্ট পাচলি পড়তে পারে—কমললোচন মোটর কোম্পানির—দুই গোছা দিয়েই শুরু করুক না, কল্যাণীকে নাড়ীর প্যাচের সঙ্গে বেঁধে রাখতে পারবে যেন, বৈঠক শুরু করলে শত শুভেন্দ্ররও সাধ্য নেই প্রমথকে হটায়—এই মেয়েটাকে ৪৯২