পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তুমি অনেক দিন হয় বাপের বাড়ি চলিয়া গিয়াছ বটে, কবে আসিবে জানি না, সেখানে কোনো এক ছন্দ নিশ্চয় পাইয়া বসিয়াছে তোমাকে, যাহা দিয়া বাকি জীবনটা কাটাইয়া দেওয়া চলে। আমিও ভাবিয়ছিলাম, যখন আমার সঙ্গে মিলিত হইলে এই রকম কোনো একটা ছন্দের পথ ধরাইয়া দিব তোমাকে—দেখিতেছি নিজেই খুঁজিয়া পাইয়াছ । মাও এখানে নাই, তিনি কয়েক মাস হইল কাশী চলিয়া গিয়াছেন, সঙ্গে লইয়া গিয়াছেন আমাদের সংসারের অবশিষ্ট নগরী—অণমার বিধবা বোন চারুকে । মার ইচ্ছা, চারুকে লইয়া অনেক দিন কাশীতেই থাকেন। বুড়া বয়সে কাশী থাকিবীর সখ যে তাহার হইল, মন্দ হইল না ; কিন্তু এখানে বাবা রহিলেন—দিনের মধ্যে অনেক বার তাহার নানা রকম তত্ত্ব-তলবের দরকার ; অসুস্থ মানুষ, মনও খুব চিন্তিত, বুঝি না এ সব কাহাকে দিয়া করাইয়া লইব । একটি চাকর অাছে অবিশ্যি, ছোকরা, নাম অজুনি, চেন তো তুমি তাহাকে ? সে অবিশ্যি অজুনিও নয়, শিখণ্ডীও নয়—মাঝামাঝি একটা কিছু। এক-এক সময় খুঁটিনাটি খানিকট কাজ বেশ মন দিয়া গুছাইয়া করে ; কিন্তু তার পরেই আসে তার অবসাদের সময়, পালাইয়া গিয়া ছাতিম তলায় চাকরদের দলে মিশিয়া তাস খেলিয়া দিন উজাড় করিয়া দেয় সে, কিংবা মনসাতলায় নিরিবিলি অশ্বখ গাছের নীচে ঘুমাইয়া-ঘুমাইয়ণ চৈত্রের দিনটা সাঙ্গ করে । পূজা-পার্বণ বা কোথাও কথকত-যাত্রা হইলে অজুনকে তিন-চার-পাচ দিনের মধ্যে খুঁজিয়া পাওয়া যায় না। তার পর এক দিন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন কাপড়ে ধূলায় ধূসরিত হইয়া দেখা দেয় । আমি বলি না কিছু তাহাকে । বেচারার মা নাই, কেহ নাই ; পৃথিবীর মাটির জন্য টান রহিয়াছে ; পৃথিবীর পথে-পথে ঘুরিতে ভালবাসে সে । ঘুরুক । আমার যদি কোনো সন্তান থাকিত তা হলে এই রকম ঘুরিতে দেখিলেই ভাল লাগিত আমার— দুই বিঘা জমির উপর আমাদের এ বাড়ির ঘর-দোরের পরিসর যে নিতান্ত কম নয় তাহা তো তুমি বিবাহের পর কয়েক মাস থাকিয়া দেখিয়াই গিয়াছ । বাড়ির এমন পড়ন্ত অবস্থা, এ পরিবারেরও, আমার তো মনে হয় দুই-তিন গুরুষের মধ্যেই সব ধ্বসিয়া যাইবে । তুমি দেখিয়া গিয়াছ, নোনা-ধরা 8ᎼᏄ. •ᎸᏄ