পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেয়াল, ইট ফাটিয়া-চুরিয়া পাটকেল হইয়া খসিয়া পড়িতেছে, মেঝের ভিতর ফাটল, আগাছা, সেখানে ইন্দ্ররও থাকে, সাপও থাকে, জীর্ণ শীর্ণ খাট ভাঙিয়া চূর্ণ হইয়া গিয়াছে, ফাগুন-চৈত্র মাসে দিঘির জল পচিয় ওঠে, বাড়ির চারিদিকে জঙ্গল, ভিতরের কোঠণগুলো ছোঁড়া-খোড়া ফাটা-টুটা বেওয়ারিশ জিনিসের ভাড়ার শুধু ; যেখানে-সেখানে ছুঁচা ছোটাছুটি করিতে থাকে। ইটিতে-ইটিতে অতীত স্মৃতিকে মাড়াইয়া চলি শুধু, গলিত চন্দন কাঠের মত বিচিত্রতার আস্বাদ পাই কখনো ; কখনো-বা গোখুরার ছোবলের মতই কেমন কী সব আঘাতে মানবাত্মা শুকাইয়া নীল হইয়া ওঠে যেন ; ইহণদের মাঝামাঝি আরো কত অনুভূতি দিনরাত তাহদের ছায়ার শরীর, ছবির শরীর, রেখা ও তন্তুর উজ্জ্বলতা ও অন্ধকার লইয়া বুদ্ধদের মত ফুরিয়। ওঠে— মুছিয়া মিলাইয়া যায় । বিশ-পঞ্চাশ বছর পরে এ বাড়িতে কে থাকিবে, ভাবিয়া ঠিক করিতে পারি না । বাড়ির চারিদিক ঘিরিয়া জঙ্গলের ভিতর শিয়ালে কঁাদিবে শুধু ; আর ঐ পলাশের ডাল হইতে জগমের শাখায়, সেখান হইতে হৃদয়ের প্রশাখায়, মেঘের রসের মত মলিন মধুর কামিনীর ঝোপের ভিতর, লক্ষ্মীপেঁচা, জোনাকি, নক্ষত্রমাখা চৈত্র-বৈশাখের রাতের সমস্ত শিশির আলো আগন্ত্রণণ কিরিয়া] ও অন্ধকার কুড়াইয়া লইয়া রহস্য সৌন্দর্যাবৃত এই জীবন ব্যাপারটাকে মাদুরের চেয়ে ঢের সুব্যবহারে লাগাইয়া যাইবে । এই ভাঙা দরদালানের সেই শেষ অতিথিদের কথা ভাবিয়া বেশ ভাল লাগে আমার । অনেক পুরুষের সুখ-দুখের আস্বাদ মাখানো এই প্রাচীন জিনিসটাকে তাহারা এক সুন্দর পরিসমাপ্তি দিবে। কিন্তু সে দিন এখনো খানিকটা দূরে । জগনই তো, লোক নাই-নাই করিয়াও এ বাড়িতে বছরের চারটি মাস ধরিয়াই আত্মীয়-স্বজনের ভিড় নিতান্ত কম নয় । তুমি চলিয়া গিয়াছ, মা চলিয়া গেলেন, চারুও গেল বটে, এখনো পিসিমা আর ছোট কাকা ছিলেন, সুশীল ছোকরাটি ছিল, আমাদের রাধুনি হিমাংশুর মা ছিল— ইহাদের লইয়া দিন চলিতেছিল মন্দ না । মা চলিয়া যাবার পর হইতে রান্নাবান্নায় অবিশ্বি খানিকটা অসুবিধা হইয়াছিল —হিমাংশুর মা রধিতে গিয়া একদম মশলা এড়াইয়া চলিত ; বাটনা বাটিতে 8ՏԵ