পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যেন কোনো রেবার তীরে, রণবীর বালুকায়, ত্রিস্রোতার পারে, আবার ঝিলমের কিনারে ভারতের দেবীপীঠগুলোকে দেখিয়া অসিতে ইচ্ছা করে— পায়ে স্থাটিয়া কড়ির মত সাদা ধূলা গায়ে মাখিয়া, দেবীতীর্থের থেকে দেবীতীর্থে ঘুরিয়া বেড়াইবার জন্য প্রাণ বিকালের রৌদ্রে পল্লির চিলের মত কঁাদিয়া মরে । নীল আকাশ বাহির হইয়া পড়ে আবার । মনে হয় জীবনে যত সুর সাধিতে চাহিয়াছিলাম সব যেন জড়ো হইয়া বুকের মধ্যে তাহদের আত্মবিহবল আবেদন জানাইতেছে, এত বড়...একসঙ্গে বহন করিতে পারি না অণমি, কাজেই মাটির দিকে তাকাই, ছেড়া প্যান্টের দিকে নজর পড়ে, পোড়া চুরুট জ্বালাইয়া লই—এই পৃথিবীতে ফিরিয়া আসি অণবীর। পকেটের থেকে বাহির করিয়া, ভাজ করা খবরের কাগজের দু-একটা শিট উল্টাই, গালের খোচা-খোচা দাড়িতে হাত বুলাই। ফৌজদারি আদালতটার লাল ইটের দেয়ালগুলোর দিকে তাকাইয়া, নিঃশব্দে গোফ চুমরাইতে থাকি । খানিকটা দূরে ঝাল-চানওয়ালা বসিয়া-বসিয়া ঝিমায়, কিন্তু পয়সা খরচ করিতে যাই না অণর । বেশ গরম, চারিদিকে পানিতাল-ডাব-তরমুজ ও পানিফলের অনেকগুলো হুদা, অসংখ্য লোক দর কষাকষি করিতেছে, কিনিয়া খাইতেছে । ছেলেবেলা বাবা এখানে আগমণকে অনেক সময় বেড়াইতে লইয়া অসিতেন—গোলাপজাম ও পানিফল কিনিয়া দিতেন—এখন কিনিয়া খাইবার দরকার নাই আগর, ছেলেমানুষ নই তো আমি । ঢের বড় হইয়া গিয়াছি । চারিদিককার খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারের থেকে চোখ সরাইয়া, গরম বাতাস মাখা দূরের প্রান্তরের দিকে ফিরিয়া তাকাই—অনেকখানি নিস্তব্ধতার ভিতর কয়েকটা শকুন বসিয়া আছে দেখি । মনে হয় সমস্ত দুপুর এই প্রান্তর ও শকুনকটির দিকে তাকাইয়া কাটাইতে পারা যায়। জীবনের সমস্ত প্রেম, বিরহ, বেদন ও স্বপ্ন দুপুরের রৌদ্রে শকুনচরা তেপান্তরের দিকে তাকাইয়া যেন অভূতপূর্ব নবজীবন পায়— কী যে হয় ভাষায় আমি কাহাকেও বুঝাইয়া বলিতে পারি না—কিন্তু মনে হয়, উহাদের দিকে তাকাইয়া জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অভিভূত হইয়া বসিয়া থাকিতে পারি, চারিদিকে লেমনেড সোডা ভাঙার শব্দ, চীনেবাদগমের খোসা, বাদামি গন্ধ, মজা তরমুজের আভ্রাণ, একজন মুসলমান ফকিরের পিছনে-পিছনে একটা তিতির পাখি চিৎকার করিয়া দৌড়াইতেছে, কাঠঠোকরণ 8૨૨