পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যান, খাইতে শুরু করি, ভাল লাগে বটে, কিন্তু কেমন একটা আচ্ছন্নত বোধ করি যেন— কাছারির থেকে সন্ধ্যার সময় ঢলঢল করিয়া ফিরিয়া আসিয়া নিজের ঘরে চুপচাপ বসিয়া খাইতেছি । সমস্ত ঘরে ইন্দ্রর খচমচ করিয়া ঘুরিয়া বেড়ায়, জানলার ভিতর দিয়া চামচিক সঁা করিয়া ঢুকিয়া ঘরের ভিতর পাক খাইতে থাকে, একটা তেলাপোকা উড়িয়া আসিয়া খাবারের থালার উপর পড়ে, হয় তো হিমাংশুর মাই নোংরা বিধবার কাপড়, জর্জরিত জীবনের জীর্ণশীর্ণ ও এক রাশ ছোট-ছোট পাকা চুলের সাদা মাথা লইয়া দরজার কাছে দাড়াইয়া অামার খাওয়া দেখিতেছে, কেমন যেন লাগে, আণমি থালা সরাইয়া ধীরে-ধীরে বাহির হইয়া যাই । অন্ধকারে মাঠের পথে ইটিতে-ইটিতে মনে হয়, আমি এই বংশের শেষ পুরুষ —আগমণর কোনো সন্তান হইল না । অণচছা, নাই-বণ হইল, কিন্তু মনে হয় অশরীরী পিতৃপুরুষেরা আমার চারিদিক ঘিরিয়া দাড়াইয়াছেন, বলিতেছেন— ‘প্রেম, বিচ্ছেদ, বেদনা ও কাতরতা এ সব তো অপমাদের আগজানা জিনিস নয় ; কিন্তু তুমি ইহাদের যে রূপ দিয়াছ তাহ। তো আমাদের রক্তের স্রোতে কোনোদিন ছিল না । বিধাতা প্রথম যেদিন মানুষ সৃষ্টি করিয়াছিলেন সেই হইতে আজ পর্যন্ত, গৌররে ঐশ্বর্যে আড়ম্বরে সাংসারিকতায় আমাদের বংশ রক্ষ। করিয়া আসিতে পারিয়াছি। কিন্তু তুমি, সে সব মুছিয়া দিতে চলিলে দেখিতেছি । যাও, ঘরে ফেরো, প্রাচীনদের জীবন-প্রণালীর নিয়ম আয়ত্ত করিতে শেখো, এক-একটা বটগাছ যেমন অনেক দিন বাচিয়া থাকে, অনেক সন্তান-সন্ততি বিলাইয়া যায়, পৃথিবীর রৌদ্র, অন্ধকার, কুয়াশা, বৃষ্টি, হিমের ভিতর হইতে বিচ্ছেদ ও অন্যতর অকৃতকার্যতা খুঁজিয়া পায় না, পায় আত্মবঞ্চনাহীন পরিতৃপ্ত পরিস্ফুর্ত জীবনের সরসতা ও কলরব, তুমিও তাহাই পাইবে —তুমিও তাঁহাই পাইবে— অন্ধকার জমিয়া ওঠে—এই ছায়ার দলকে আমি উড়াইয়া দেই । মাঠের পথে দূরে, আরো দূরে, ইটিতে স্থাটিতে মুখোমুখি অৰ্জুনের সঙ্গে দেখা হইয়া যায়। বলি—কোথায় ছিলি রে ; এ চার-পাচ দিন কাজ করতে অসিস নি যে ! ছেলেটি কোনো জবাব দেয় না—বাপ নাই, মা নাই, কেউ নাই, কিছু নাই, ՑՏՑ