পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ট্রেনে ব্যারাকপুরে গিয়েছে নিশীথ, বাসেও। পায়ে হেঁটে বেড়িয়েছে যশোর রোডে । কয়েক বছর আগে শীতকালে । জাপানির তখন কলকাতা আক্রমণ করে-করে । বেশ লাগত এক-একা বেড়াতে । দমদমে এক খুড়তুতে ভাইয়ের বাংলোতে থাকত । খুড়তুতে ভাই অয়ারলেসে কাজ করত । 'না, মোটরে চেপে বেড়াই নি যশোর রোডে—'

  • যণবেন ?

‘জিতেন এসে নিক ।” ‘জিতেন বেড়াতে যাবে না ।” ‘কেন ? ‘অফিসের কাজের চাপ বেশি –নমিত ডান হাতের আঙুলের ফঁাকে সিগারেটের দিকে তাকিয়েছিল, জ্বালায় নি এখনো । ‘বাড়িতে এসেও অফিস ? সন্ধাপর সময় বেড়াতে যেতে পারবে না ? “এ সাতদিন কাজের চাপ খুব বেশি। অনেক রাত আদি জাগতে হবে । চলুন’—নিশীথের দিকে তাকাল নমিতা—‘সাড়ে দশটা আদি ছুটে তারপর ফিরে আসব, একটা নাগাদ বাড়ি পৌছে যাব।' নিশীথের হাতের সিগারেট নিভে গিয়েছিল—অনেক ক্ষণ। সিগারেটটা হাতেই রয়ে গেছিল তবু । অর্ধেক পুড়েছে শুধু । জগলিয়ে নিলে হয়, কিন্তু অ্যাশ-ট্রের ভিতর ফেলে দিয়ে নমিতার দিকে সাত-পাচ ভেবে তাকাল নিশীথ । নমিতার চোখে নিরপরাধ প্রাণোচ্ছাসের তাগিদ উপচে পড়ছে, খারাপ লাগল না তার কিন্তু । তবুও একটু ছিটেফোট কিসের বাষ্প খেলে যাচ্ছে যেন, কিংব। নিশীথের নিজের চোখ থেকে প্রতিফলিত হল কি নমিতার চোখে ? "বাঃ, সিগারেটটা ফুকতে না-ফুকতেই ফেলে দিলুম। কেমন ভুলো মন আগমণর—' টিন এগিয়ে দিল নমিত । টিনের ঢাকনি এ’টে গিয়েছিল। জোর দিয়ে, মুগ্ধভাবে ঠোট কুচিকে, খুলে দিল । সিগারেট—সিগারেটের টিনটাও, নিশীথের হাতে রয়ে গেল । তার অন্যমনস্ক হাতে কে যেন গছিয়ে দিয়েছে । নিজের সেগফণর পাশে রেখে দিল টিনটা । কফি আর কেক নিয়ে দাড়াল এসে বাবুর্চি। তিন জনের আন্দাজ জিনিস। নমিত নিশীথ—আর-কে খাবে ? একটা বড় তেপয়ের ওপর সাজিয়ে দিতে লাগল । C8