পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অনিমেষভাবে চুপ করে থেকে কিছুক্ষণ পরে নমিতা বলল—‘নিস্তব্ধতা আছে মানুষের জীবনে । কিন্তু তা ঘুম ? মৃত্যু ? ঘরের ভিতর কোথায় যেন শবদ হল—বেড়ালের ? বাতাসের ? লোক জনের ?—“আমি তা মনে করি না । নমিতা বললে যেন ঘুমের থেকে জেগে উঠে । তা মনে না-করাই স্বাভাবিক । সাদা সাধারণ পথে চলতে-চলতে সহজ কথাবার্তার ভিতর দিয়েই জটিলতা এসে পড়ে, কথাবার্তা বলতে-বলতে আজ নিবিড়ত এসে ও পড়েছিল হয় তো—সোজশ সহজ পথে, কিন্তু সব গহনতাই নেশার মতন জিনিস । নেশায় ধরলে মন ব্যক্তিগত হয়ে উঠতে চায়, নিস্তব্ধতা আছে ঘুম আর মৃত্যুর— অগ্রসর হচ্ছে সেই দিকে নিশীথের জীবন । অগ্রসরের সীমানায় পৌছুলেই সমাধি, যে-সংস্কৃতি ও বৃদ্ধির ভিতর থেকে জেগেছিল নিশীথের জীবন চল্লিশ বছরেরও আগে, নৈস্ফল্য ভেদ করে সার্থকতায় পৌছুবার আশা সে পোষণ করেছিল বারবার । আশাকে সফল করে তুলবার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টাও করেছে কতবার সে । কিন্তু কিছুতেই ভেদ করা সম্ভব হল না । কিন্তু নমিতা আরএক পৃথিবীর । তার সফলতা কিংবা ব্যর্থতা অন্য রকম। ঘুম বা মৃত্যুর বাইরে সে এক অন্য কৈবল্যের স্তর । টাকা রয়েছে সেখানে—টীকাই সব ; মিলন রয়েছে সেখানে, মিলনই সব ; দেহ রয়েছে—নানা রকম সুধা, ফেনা, সৈন্ধবের স্বাদ উপলব্ধির ভিতরে পৃথিবীর মাটিকে নিকটতমের মত পায় শরীর । আকাশের নক্ষত্ৰলোকের ব্যক্তির ভিতরে কমিশরীরের মত আলোকিত হয়ে ফেরে মন । কেন ঘুমোতে চাইবে ও জগতের মানুষ ? কেন মৃত্যু চাইবে ? নমিতার মতন জীবন পাওয়া—কিংবা জিতেন দাশগুপ্তের মতন ; সম্ভব কি নিশীথের পক্ষে ? ‘খুব বেশি রাতে আসে টেলিফোন আপনার । হাত বাড়িয়ে বাতি নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকারের ভিতর কান পেতে শোনেন ? মানুষ মানুষের অন্তরঙ্গ বলেই মেশিনের স্বাদ এত বেশি।’ মেশিনের ? *ই্যা টেলিফোনের’—নিশীথ বললে—“টেলিফেণনের ঘরেই শোব অগমি ।’ ‘অন্য সব দিক দিয়েই ঘরটা খুব ভাল । বেশ নিরিবিলি ঠাণ্ডা । কলকাতার চারিদিকের হাওয়া এসে কথা বলে যায় যেন ; কিন্তু মানুষকে ঘুম পাড়িয়ে দেবার জন্য । জেগে-জেগে ঘুমিয়ে যাবে মানুষ, তার পর সাত ভাই চাপার 48