পাতা:জীবনানন্দ সমগ্র (প্রথম খণ্ড).pdf/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেওয়াল-ক্যালেণ্ডার দুটো উল্টে-পাল্টে শিলাবৃষ্টির মত ঝাপিয়ে পড়তে লাগল ছলগৎ-ছলগৎ করে দেওয়ালের উপর । বাইরে পটকা ফলের মত আলোর রং যেন—গাছ, পাখি, আকাশ ছুঁয়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পড়ছে ; যেন কেউ ছিল না এখানে, তাকে তারা সুজাতার মূর্তি দিয়েছে, অন্যমনস্ক হয়েছিল পুরুষ, তাকে তারা বিপ্রতিভ করে তুলেছে ; কনে-দেখা আলোর কণিকারাশিকে জ্বলিয়ে জাগিয়ে তুলে বিচলিত করে দিয়ে পুরুষটিকে, নিমেষনিহত করে রেখে নারীকে হু হু করে ছুটে আসছে চৈত্রের অবলায়িত বাতাস ; ডানার পালক ছিঁড়ে শীদ। পায়রার, উড়ন্ত কাকটাকে ধাক্কা দিয়ে কার্নিশে কাত করে, শিমূলের তুলে উড়িয়ে কোথায় ছুটে চলে গেল তারা সব কমলা রঙের ঐ মেঘ—সুমাত্রা, শ্যাম, মালয়ের মত ছেড়াফোড়া মেঘের আঁশ নিভিয়েনিভিয়ে ফেলে । 'না, আজ আর বেরুব না নিশীথবাস্ত্ৰ । ‘কী করবেন তা হলে ?’ ‘চলুন আপনাকে সেই বইটা দেব । আমিও একটা বই পড়ব এখানে ড্রয়ি রুমে বসে ।" বই অনা হল । বাতি জ্বালানো হল । পড়তে বসল দু জনে দুটো সো ফায় । খুব কাছাকাছি নয়, দূরে নয়, নেহাত মুখোমুখি নয়, আড়াআড়িভাবে মুখোমুখি । ‘ভাগ বসালাম না তো আপনার নিরিবিলি বই পড়ার উপর নিশীথবাৰু ? কোনো উত্তর দিল না নিশীথ । নিঃশব্দে পড়তে লাগল দু জনে, প্রায় দু ঘণ্টা উতরে গেল । হাত বাড়িয়ে সিগারেটের টিন থেকে বের করে নিয়ে সিগারেট জ্বলিলে—খেল—মাঝে-মাঝে তাকিয়ে দেখল নীল ধোয়ার সরু ফালির দিকে —দেখল, বেড়ে বড় হয়ে শাদ নীল ধোয়া মিলিয়ে যাচ্ছে সব । নড়ে-চড়ে বসল তারা—মাথা তুলে তাকিয়ে নেয় ; পরের বার চোখাচোখির সময় ক্ষতিপূরণ করে কী যে বীতাশোক তিমিরণাতীতভাবে, কিন্তু তার পরের বণর চোখকে এড়িয়ে চলে চোখ, কোনো কিছু হয়েছিল স্বীকার করতে~চায় না ; উপলব্ধি করেছিল তাদের ভিতর একজন—নাকি দু জনেই তারা ? কিন্তু তাও একটা কথাও মুখ দিয়ে বেরল না কারো ; নিজের সোফা ছেড়ে দু মুহূর্তের বাইরের সন্ধানেও উঠে গেল না কেউ । কতদূর পড়া হল বই ? শিখণ্ডীর মতন নয় 《여