পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 হিরন্ময়ীর স্কুলের শিক্ষা হয়ত আর অধিক দূর অগ্রসর হয় নাই, তবে তিনি যে প্রায় এই সময় হইতেই বাংলা গদ্যপদ্য রচনায় হস্তক্ষেপ করেন, ‘সখা’ পাঠে তাহা জানা যাইতেছে। ‘সখা’, ‘বালক’, ‘ভারতী ও বালক’ এবং ‘ভারতী’তে ক্রমশঃ তাঁহার গদ্যপদ্য রচনা প্রকাশিত হইতে থাকে। তিনি সরলা দেবীর সঙ্গে একযোগে ১৩০২ হইতে ১৩০৪ সাল পর্যন্ত ‘ভারতী’ সম্পাদনা করেন। স্বদেশী আন্দোলন কালে নারীজাতিকে দেশসেবায় অনুপ্রাণিত করিবার উদ্দেশ্যে হিরন্ময়ী লেখনী পরিচালনা করেন। এই সময় তাঁহার কতকগুলি দেশপ্রেমোদ্দীপক রচনা ‘ভারতী’তে প্রকাশিত হয়।

 হিরন্ময়ী দেবী ১৯০৬ সনে ‘বিধবা শিল্পাশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করেন। এই শিল্পাশ্রমের কার্যে তিনি নিজেকে সঁপিয়া দিয়াছিলেন। যথাস্থানে এ বিষয়টি সম্বন্ধে উল্লিখিত হইবে।

 ১৯২৫, ১৩ই জলাই হিরন্ময়ী দেবীর দেহান্ত ঘটে। তাঁহার মাতাপিতার প্রতি ভক্তি ছিল অসামান্য।


 দাদা: জ্যোৎস্নানাথ ঘোষাল। জন্ম ১৮৭১ সন। তিনি আই-সি-এস হইয়া বোম্বাইয়ে স্থিত হন। ১৯৩০ সনে অবসর গ্রহণ করেন।

॥ দুই ॥

 বিষ্ণু: বিষ্ণুচন্দ্র চক্রবর্তী (১৮০৪-১৯০০)। রাজা রামমোহন রায়ের সময় হইতে বিষ্ণুচন্দ্র ব্রাহ্মসমাজের গায়ক ছিলেন। দীর্ঘ পঞ্চাশ বৎসর একক্রমে গায়কের কার্য করিয়া ১৮৮৩ সনে বিষ্ণু অবসর গ্রহণ করেন। অবসর-গ্রহণ কালে ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ (ফাল্গুন ১৮০৪ শক) লেখেন:

 “পঞ্চাশ বৎসর অতীত হইল মহাত্মা রামমোহন রায়ের সময় হইতে শ্রীযুক্ত বিষ্ণুরাম চক্রবর্তী আদি ব্রাহ্মসমাজে অতি নিপুণতার সহিত সঙ্গীত করিয়া আসিয়াছেন। তিনি এক্ষণে বার্ধক্য নিবন্ধন অবসর গ্রহণ করিয়াছেন। অতঃপর এইরূপ মধুর কণ্ঠে ব্রহ্মসঙ্গীত আর শুনিতে পাইবেন কিনা সন্দেহ। যাঁহারা শ্রদ্ধান্বিত হইয়া উপাসনায় যোগ দিয়া আসিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে প্রায় এমন কেহই নাই বিষ্ণুর মধুর সঙ্গীতে যাঁহার অশ্রুপাত না হইয়াছে। বহু দিনের পর ব্রাহ্মসমাজে আমাদের একটি অভাব উপস্থিত হইল। পুরণ হইবে কিনা ঈশ্বর জানেন।...”

 বিষ্ণুচন্দ্র চক্রবর্তী ১৯০০ সনের ৫ই মে দেহত্যাগ করেন। ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’য় (জ্যৈষ্ঠ ১৮২২ শক) তাঁহার মৃত্যু-সংবাদ এইরূপ প্রকাশিত হয়:

 “সংবাদ। আমরা শোকসন্তপ্ত হৃদয়ে প্রকাশ করিতেছি আদি-ব্রাহ্মসমাজের সুপ্রসিদ্ধ গায়ক বিষ্ণুচন্দ্র চক্রবর্তী ২২ বৈশাখ ইহলোক পরিত্যাগ করিয়াছেন। ইঁহার বয়ঃক্রম ৯৬ বৎসর হইয়াছিল। মহাত্মা রামমোহন রায়ের সময় হইতে ইনি ব্রাহ্মসমাজে সঙ্গীত করিতেন। ইঁহার সুকণ্ঠ তান মান রাগ রাগিণী রক্ষা করিয়া ব্রহ্মসঙ্গীত গাইতে আর কেহই রহিলেন না। ঈশ্বর ইঁহার অমর আত্মার কল্যাণ সাধন করুন।”

॥ তিন ॥

 সেজ মামা: হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪৫-১৮৮৪)। হেমেন্দ্রনাথ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের তৃতীয় পুত্র। ঠাকুর-পরিবারে অন্তঃপুরে স্ত্রীশিক্ষার বিশেষ উদ্যোগী। হেমেন্দ্রনাথ স্বয়ং পরিবারস্থ মহিলাদিগকে সাহিত্যাদি বিষয় সাগ্রহে পড়াইতেন। ঠাকুরবাড়ির বধূ ও কন্যাদের স্মৃতিকথা হইতে এ বিষয় কিছু কিছু জানা যায়। জ্ঞানদানন্দিনী দেবী বলেন:

 বিয়ের পর মেজ দেয়র হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইচ্ছে করে আমাদের পড়াতেন।

২১২