পাতা:জীবনের ঝরাপাতা.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পর পর প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয় দুইটি পরিচালিত হইত। পরে বেথুন স্কুল ও কলেজ পরিচালনায়ও তিনি সহযোগিতা করেন।

 দুর্গামোহনের তিন কন্যা—সরলা, অবলা এবং শৈলবালা। শৈলবালা হিরন্ময়ী দেবীর সঙ্গে একই বৎসরে—১৮৮২ সনে বেথুন স্কুল হইতে মাইনর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। কলিকাতার বিখ্যাত হোমিওপ্যাথ ডাঃ ডি. এন. রায়ের সঙ্গে শৈলবালার বিবাহ হয়।


 শিবনাথ শাস্ত্রী: কন্যা হেমলতা। পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীও (১৮৪৭-১৯১৮) অন্যতম ব্রাহ্ম নেতা। তিনি কবি, সাহিত্যিক, সংবাদপত্রসেবী এবং বিবিধ জনহিতমূলক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগী সদস্য।

 তাঁহার জ্যেষ্ঠা কন্যা হেমলতা দেবী (১৮৬৮-১৯৪৩)। হেমলতা বঙ্গমহিলা বিদ্যালয়ে এবং বেথুন স্কুলে শিক্ষালাভ করেন। বেথুন কলেজ হইতে বি-এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ডাঃ বিপিনবিহারী সরকারের সঙ্গে তাঁহার বিবাহ হয় (১৮৯৩) হেমলতা আজীবন শিক্ষাব্রতী ছিলেন। প্রধানতঃ তাঁহারই উদ্যোগে স্থাপিত দার্জিলিং মহারাণী বালিকা বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষা ছিলেন ত্রিশ বৎসর যাবৎ। তিনি কয়েকখানি স্কুলপাঠ্য ও শিশুপাঠ্য পুস্তক প্রণয়ন করেন। তাঁহার ‘মিবার গৌরব কথা’, ‘নেপালে বঙ্গনারী’, ‘পণ্ডিত শিবনাথ শাস্ত্রীর জীবনচরিত’ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তাঁহার ‘তিব্বতে তিন বৎসর’ ধারাবাহিকভাবে ‘প্রবাসী’তে প্রকাশিত হয়।


॥ পাঁচ ॥

 কাশিয়াবাগান: সরলা দেবী এই পুস্তকে ‘কাশিয়াবাগানে’র কথা উল্লেখ করিয়াছেন। পিতামাতার সঙ্গে তিনি বাল্যকালে এখানকার বাগানবাড়িতে কয়েক বৎসর বাস করেন। ‘কাশিয়াাগানে’র কথা তাঁহার জীবনে একটি বিশেষ স্থান অধিকার করিয়া আছে। ‘কাশিয়াবাগান’ অঞ্চল কলকাতাস্থ বর্তমান রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রীট এবং উল্টাডিঙ্গি মেন রোডের মোড় বরাবর অনেকটা জায়গা জুড়িয়া ছিল। এই নামটির উৎপওি সম্বন্ধে এ অঞ্চলের প্রাচীন ব্যক্তিদের নিকট হইতে এইরূপ শুনিয়াছি:

 ‘কাশিয়াবাগান’ উল্টাডিঙ্গি খালের সন্নিকট। এই স্থানটি পূর্বে একটি ব্যবসায়কেন্দ্র ছিল। পূর্ববঙ্গ হইতে বড় বড় নৌকাবোঝাই হইয়া ‘বালাম’ চাউল ও অনান্য কাঁচা মাল এখানে আমদানী হইত। আবার এখান হইতে ঐসব নৌকায় মালপত্র পূর্ববঙ্গে চালান যাইত। এসকল নৌকা নঙ্গর করবার জন্য লম্বা মোটা দড়ি দরকার হইত। ইহাকে ‘কাছি’ বলে। উল্টাডিঙ্গির এই অঞ্চলে ‘কাছি’ তৈরী হইত প্রচুর। আর এ সমুদয় নানা দিকে চালান করা হইত। বিস্তর কাছি তৈরী হইত বলিয়া কাছির বাগান বলা হইত। এই কাছির বাগান হইতেই ‘কাশিয়াবাগান’ নামটির উৎপত্তি।


 মেজমামা: সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৪২-১৯২৩) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যম পুত্র। ভারতবর্ষের প্রথম আই-সি-এস বলিয়া তিনি পরবর্তী কালে প্রসিদ্ধিলাভ করিয়াছেন। কিন্তু অন্য নানা গুণেও তিনি ভূষিত ছিলেন। মহর্ষির শিক্ষায় ও তত্ত্বাবধানে জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের ধর্মপ্রবণতা এবং সাজাত্যবোধ তাঁহার মধ্যেও বিশেষভাবে অনুপ্রবিষ্ট হয়। হিন্দু মেলার দ্বিতীয় অধিবেশনে (১৮৬৮) গীত—“মিলে সবে ভারত সন্তান, এক মন এক প্রাণ, গাও ভারতের যশোগান” —তাঁহারই রচনা। অন্যতম জাতীয় সঙ্গীত-রূপে ইহার খুবই প্রসিদ্ধি। সত্যেন্দ্রনাথ বোম্বাই প্রদেশে সিবিলিয়ানী কর্মে নিযুক্ত ছিলেন। একারণ বোম্বাই ও গুজরাট অঞ্চলে ঠাকুর পরিবার এবং ঠাকুর পরিবারের নিকট-আত্মীয়দের বারবার যাতায়াত ও ঐ অঞ্চলবাসীদের সঙ্গে মেলামেশার সুযোেগ ঘটে। রবীন্দ্রনাথ, স্বর্ণকুমারী দেবী, সরলা

২১৪