পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোটা দুই তিন কঠিন কথা

বাদ অদ্বৈততত্ত্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত ছিল; আধুনিক নিরাকারবাদ দ্বৈততত্ত্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত। এ দুয়ের মধ্যে মূলতঃ প্রভেদ এই। দ্বৈতাদ্বৈতের বিচার এস্থলে অনাবশ্যক ও অপ্রাসঙ্গিক। দ্বৈতবাদই সত্য, না, অদ্বৈতবাদ সত্য,—এ প্রশ্ন এ স্থলে তোলা নিম্প্রয়োজন। বর্ত্তমান প্রসঙ্গে বিচার্য্য কেবল এইটুকু—দ্বৈততত্ত্বে প্রকৃত নিরাকারবাদের প্রতিষ্ঠা হয় কি না।

আকারের অর্থ কি

 যার আকার নাই, আকার সম্ভব নহে, তাহাই নিরাকার। কিন্তু এই আকার বলিতে কি বুঝি? আকারের লক্ষণ কি? সীমাবদ্ধ করাই কি আকারের মূল ধর্ম্ম নহে? আকাশের আকার নাই—কিন্তু যখনই ঘটের বা, পটের দ্বারা এই আকাশকে পরিচ্ছিন্ন ও সীমাবদ্ধ করি, তখনই ঘটাকাশ-পটাকাশের উৎপত্তি হয়। অন্য ভাষায় যাহাকে dimension কহে, তাহাই আকারের মৌলিক লক্ষণ। পরিচ্ছিন্নতাই এই dimensionএর প্রাণ। য।হা পরিচ্ছিন্ন নহে, তাহার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, ভেদ নাই— থাকা অসম্ভব। সুতরাং যার আকার আছে, তাহাই পরিচ্ছিন্ন, তাহাই সীমা বদ্ধ। যাহা নিরাকায় তাহা অপরিচ্ছিন্ন ও অসীম। এখন প্রশ্ন এই দ্বৈতবস্তু মাত্রেই পরিচ্ছিন্ন কিনা? আর তাই যদি হয়, তবে দ্বৈতবাদে পরিচ্ছিন্ন ব্রহ্ম বা ঈশ্বরতত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করে কি না? এবং তাহা হইলে, দ্বৈতবাদীমাত্রেই, প্রকৃতপক্ষে, সাকারবাদী কি না?

দ্বৈতবাদ ও সাকারবাদ

 দ্বৈতবাদ তিনটী পরস্পর পরিচ্ছিন্ন তত্ত্ব সর্ব্বথাই প্রতিষ্ঠিত করিয়া থাকে। প্রথম ঈশ্বরতত্ত্ব, দ্বিতীয় জীবতত্ত্ব, তৃতীয় জড়তত্ত্ব। ঈশ্বর, জীব ও জড় হইতে পৃথক্‌; জীব, ঈশ্বর ও জড় হইতে ভিন্ন;—ইহাই দ্বৈতবাদের সিদ্ধান্ত। ঈশ্বরের সঙ্গে জীব ও জড়ের সম্বন্ধ যেরূপই নির্দিষ্ট হউক না।