পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রথম চিন্তা

কেন,~যতক্ষণ জীব ও জড় হইতে তিনি পৃথক ও পরিচ্ছিন্ন,—ততক্ষণ জীব ও জড়ের দ্বারা তিনি সীমাবদ্ধ। আপাতত ইহাই দ্বৈত সিদ্ধান্তের অপরিহার্য্য পরিণাম বলিয়া সকলেরই মনে হইবে। কিন্তু ঈশ্বরতত্ত্বকে কোনরূপে সীমাবদ্ধ করিলে, তাহার সত্য নষ্ট ও মর্য্যাদা হানি হয়। সুতরাং দ্বৈতবাদী, ঈশ্বরতত্ত্বের অসীমত্ব ও সর্ব্বথা ব্যাপকত্ব রক্ষা করিবার জন্য বিশিষ্টাদ্বৈত এবং দ্বৈতাদ্বৈত প্রভৃতি সিদ্ধান্তের প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। কিন্তু এ সকল সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠিত করিতে যাইয়া, জীব ও ভগবানের পার্থক্য রক্ষা করিবার জন্য, তাঁহারা কোনো না কোনো আকারে সাকারবাদও প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন। ঐতিহাসিক আলোচনায় দেখি যে, যেখানেই বিশুদ্ধ অদ্বৈত সিদ্ধান্ত পরিতাক্ত হইয়াছে, সেইখানেই কোনো না কোনো আকারের সাকারবাদ অবলম্বিত হইয়াছে।

খৃষ্টীয়ান্‌ ও বৈষ্ণব তত্ত্ব

 পাদ্রিরা যাই বলুন না কেন,—এ তত্ত্বের অনুশীলন যারা করেন, তাঁরা কৃষ্ণতত্ত্বের সঙ্গে খৃষ্টতত্ত্বের আশ্চর্য্য সাদৃশ্য দেখিতে পান। বাহিরের সাদৃত্যের-কৃষ্ণের জন্মলীলা ও খ্রষ্টের জন্ম-বিবরণের মধ্যে যে অদ্ভূত ঐক্য দেখা যায়,—কংশ ও হীরডের কাহিনী,”এ সকলের মূল কি, পণ্ডিতেরা তাহার কিছু কিছু আলোচনা করিয়াছেন। কিন্তু সে বিচার এ স্থলে অপ্রাসঙ্গিক। তত্ত্বের দিক্‌ দিয়াই বৈষ্ণব ধর্ম্মের সঙ্গে খৃষ্টীয়ান ধর্ম্মের বিশেষ সাদৃশ্য দেখা যায়। উভয়ই ভক্তি-পন্থা সুতরাং উভয়ই সমজাতীয় ধর্ম্ম, এ সাদৃশ্যের ইহা এক কারণ। আর ভক্তি-পন্থা বলিয়া, উভয়ই শুদ্ধ অদ্বৈততত্ত্বের বিরোধী এবং দ্বৈতসিদ্ধান্তের পক্ষপাতী। এই জন্য খৃষ্টীয়ান ও বৈষ্ণব উভয়েই এক অর্থে সাকারবাদী।