পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোটা দুই তিন কঠিন কথা

 আর এই সিংহাসন হইতে বিদ্যুৎ বজ্রনিনাদ ও বিবিধ বাণী প্রসৃত হইতেছিল, এবং এই সিংহাসনের সম্মুখে সাতটি দীপ জ্বলিতেছিল। এই সপ্ত দীপ ঈশ্বরের সপ্তপ্রাণ বা আত্মা।

জোহনের ঈশ্বর সাকার না নিরাকার

 জোহন যদিও ঈশ্বরের আকার অনির্দ্দিষ্ট রখিয়াছেন, তথাপি এই ঈশ্বর যে একান্ত নিরাকার নহেন, এই বর্ণনায় ইহা অতি পরিস্কার ভাবেই প্রমাণিত হয়।

 প্রথমত সিংহাসনে বসিতে যাইয়াই তিনি দেশে আবদ্ধ হইয়াছেন। দ্বিতীয়ত তাঁহার সপ্ত ‘স্পিরিটের’ উল্লেখ হইয়াছে। যিশুখৃষ্ট ঈশ্বরকে এই ‘স্পিরিট’ রূপে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছেন। God is Spirit and ye shall worship God in Spirit and in Truth.—ঈশ্বর স্পিরিট, তোমরা স্পিরিটে ও সত্যভাবে তাঁহার ভজনা করিবে। এই স্পিরিট বস্তু যে কি, নির্দ্ধারণ করা কঠিন। স্পিরিট বলিতে প্রাণ বুঝায়, আত্মা বুঝায়, শৌর্য্য বুঝায়, শক্তি বুঝায়, অন্তরের ভাবও বুঝায়। আমাদের আত্মা শব্দ যেমন বহু অর্থ-ব্যঞ্জক, ইংরাজী স্পিরিটও সেইরূপ। মোটের উপর God is Spirit, ঈশ্বর প্রাণস্বরূপ, এই বলিলেই, বোধ হয়, ইহার মর্ম্ম প্রকাশিত হয়। তোমরা প্রাণের সঙ্গে, সত্যভাবে,তাঁহার ভজনা করিবে। অন্তত: যিশু এই স্পিরিট শব্দ দ্বারা ঈশ্বর নিরাকার এমন অর্থ ব্যক্ত করিতে চাহিয়াছিলেন, মনে হয় না। কারণ, এরূপ বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না। তিনি ইহুদীদিগকে উপদেশ দিতেছিলেন। আর যিশুর সময়ে ইহুদায় কোনোপ্রকারের সাকারোপাসনা প্রচলিত ছিল না। ইহুদাধর্ম্ম সে সময়ে বাহ্য ক্রিয়াকলাপে আবদ্ধ হইয়া প্রাণশূন্য হইয়া পড়িয়াছিল। তাহার অন্তমুর্খিনতা লোপ পাইয়াছিল। যিশু সর্ব্বোতোভাবে ইহুদার এই বহিমুর্খিনতারই বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করেন।