পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোটা দুই তিন কঠিন কথা।
১৩

 কিন্তু এখানে (৮২ দাউদের গীত) যদিও ইহুদার ঈশ্বরের একছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত দেখিতে পাই, বাইবেলের পুরাতন পুস্তকের আদিভাগে তাহাও দেখা যায় না। সেখানে ইহুদার ঈশ্বর ইহুদারই ঈশ্বর, ইহুদারই পূজ্য, ইহুদীদিগের সঙ্গেই তাঁর বিশেষ সম্পর্ক, এই মাত্রই দেখি। অপর জাতির অন্য দেবতা আছেন, থাকুন; যতদিন সে সকল জাতি ইহুদার সঙ্গে বিরোধ করিতে না আসে ও ইহুদার উন্নতির পথে না দাঁড়ায়, ততদিন ইহুদার ঈশ্বরও সে সকল জাতির দেবতার সঙ্গে কোনো প্রকারের প্রতিযোগিতায় প্রবৃত্ত হন না।

এথ্‌নিক বা সামাজিক ধর্ম্ম।

 বস্তুত এথ্‌নিক ধর্ম্মমাত্রেই সামাজিক বন্ধন রক্ষা করিবার প্রাণপণ চেষ্টা দৃষ্ট হয়। সমাজ-বন্ধনের উপরেই এথ্‌নিক ধর্ম্মসকল প্রতিষ্ঠিত, সুতরাং সমাজের ঘননিবিষ্টতা ও স্বাতন্ত্র্য রক্ষার জন্য এথ্‌নিক ধর্ম্ম সর্ব্বদাই সচেতন থাকে। অন্য সমাজের সঙ্গে আপন সমাজের লোক যাহাতে না মিলিয়া মিশিয়া যাইতে পারে, এই জন্য এথ্‌নিক ধর্ম্মে নানাবিধ বিধি নিষেধ প্রতিষ্ঠিত থাকে। ইহুদার দশ আজ্ঞায় সাকারোপাসনার বিরুদ্ধে যে আদেশ দেখিতে পাই, তাহার প্রকৃত মর্ম্ম অপর দেবোপাসনা নিবারণ করা, সাকারবাদ পরিহার করা নহে। কারণ, যে জিহোবা এই আজ্ঞা প্রচার করেন, তিনি স্বয়ংই জড় আকারবিশিষ্ট হউন বা না হউন, অন্ততঃ পরিচ্ছিন্ন স্বভাবসম্পন্ন এবং সেই অর্থে যে অবশ্যম্ভাবিরূপেই সাকার, ইহা অস্বীকার করা অসম্ভব। কেবল তাহাই নহে, মুসাই এই দশাজ্ঞা প্রাপ্ত হন। জিহোবা যে মুসার অন্তরে এই সকল বিধি প্রকাশ করেন, তাহা নহে। মুসা আমাদের ঋষিদের ন্যায় মন্ত্র “দর্শন” করেন নাই। জিহোবা দুই খণ্ড প্রস্তর ফলকে এই দশটী আজ্ঞা আপনার অঙুলি দ্বারা খোদিত করিয়া মুসার হস্তে প্রদান করেন।