পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
প্রথম চিন্তা

 আদিতে “বাক্য” ছিল, এই বাক্য ঈশ্বরের সঙ্গে ছিল, এবং এই “বাক্য”ই ঈশ্বর ছিল। এবং এই “বাক্য”ই যিশুরূপে অবতীর্ণ হয়। গ্রীসীয় ভাষায় লগস্‌ Logos শব্দের ইংরাজী অনুবাদ word; পাদ্রিরা বাংলাতে ইহাকেই “বাক্য” বলিয়াছেন। এই লগস কথা গ্রীসীয় দর্শনের কথা। লগসবাদ গ্রীক্‌ তত্ত্ববিচারের একটী প্রধান অঙ্গ। ইহার আলোচনা এ স্থলে সম্ভব নহে। এই মাত্র বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, পণ্ডিতেরা এখন প্রায় একবাক্যে এ কথা স্বীকার করেন যে, খৃষ্টীয় লগসবাব, যাহার উপরে যিশুর দেবত্ব ও অবতারত্ব প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে, জোহন কিম্বা যিনিই খৃষ্টীয় ধর্ম্মগ্রন্থের এই চতুর্থ পুস্তক রচনা করুন না কেন, ইহা গ্রীক্‌ সাধনা হইতে গ্রহণ করিয়াছেন। ইহুদার প্রাচীন তত্ত্ব বিচারে ইহার কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। গ্রীকেরা নিতান্তই সাকারোপাসক ছিলন। গ্রীসের তত্ত্বজ্ঞানীরা বিবিধভাবে এই সাকারোপাসনার দেবদেবীর ব্যাখ্যা করিয়া, গ্রীসের উচ্চতর তত্ত্বের সঙ্গে তাহার সামঞ্জস্য করিতে চেষ্টা করেন। কিন্তু ইহুদা ধর্ম্মে ও ইসলামে যেভাবে সাকারবাদ একান্তরূপে বর্জ্জনের চেষ্টা দেখা যায়, গ্রীসে তাহা কখনো দেখা যায় নাই। এই বিষয়ে গ্রীসের ও ভারতবর্ষের আর্য্যগণের মধ্যে অনেক সাদৃশ্য দৃষ্ট হয়। গ্রীসের তত্ত্বজ্ঞানের আশ্রয়ে খৃষ্ঠীয় ঈশ্বরতত্ত্ব ফুটিয়া উঠে, সুতরাং ইহা যে নিতান্ত নিরাকার নহে, এ আর বিচিত্র কি!

খৃষ্টীয় ঈশ্বরতত্ব, সাকার-নিরাকার

 ফলতঃ তত্ত্ববস্তু, যাহা দ্বারা তাত্ত্বিকেরা এই জটিল বিখ-সমস্যার মীমাংসা করিতে চেষ্টা করেন, তাহা শুদ্ধ নিরাকারও নহে, শুদ্ধ সাকারও নহে; তাহা সাকারে নিরাকার ও নিরাকারে সাকার। আমাদের দেশের দার্শনিক পরিভাষাতে এই তত্ত্বকে ব্যক্ত করিতে গেলে এই বলিতে হয় যে, স্বরূপত তত্ত্ববস্তু নিরাকার, তটস্থ লক্ষণায় সাকার।