পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোটা দুই তিন কঠিন কথা
১৯

সাকার। তবে জড় আকারসম্পন্ন এই অর্থে এস্থলে, সাকার শব্দ ব্যবহৃত হয় না। সাকার বলিতে চিদাকারও বোঝায়। আর আমাদের দেশের শাস্ত্রেতেও সাকার বলিতে প্রকৃত পক্ষে চিদাকারই ব্যক্ত হয়, জড়াকার নহে। এবং এই চিদাকার অর্থে, খৃষ্টীয় ঈশ্বরতত্ত্বও সাকার, অথবা নিরাকারে-সাকার বা সাকারে-নিরাকার।

খৃষ্টীয় সাধনায় সাকারবাদ।

 আর তত্ত্বেতে যদিও যিশু চিদাকার সম্পন্ন বলিয়াই প্রতিষ্ঠিত হন, খৃষ্টীয় সাধনাতে ফলত তাঁহাকে মানবাকারেই প্রতিষ্ঠিত করে। আমরা এদেশে, সাধন-ভজন বলিতে যাহা বুঝি, খৃষ্টীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্যাথলিক মণ্ডলীতেই কেবল তাহা ভাল করিয়া দেখিতে পাই। প্রোটেস্টেণ্ট্‌ মণ্ডলী মধ্যে বাইবেল পাঠ এবং প্রার্থনাই প্রধান, এমন কি একমাত্র সাধন-ভজন বলিয়া পরিগণিত হয়। ইংলওে, আংলিকান্ দলের মধ্যে এর চাইতে একটু বেশী ভজননিষ্ঠা দেখা যায় বটে। আমাদের এদেশে যে সকল প্রোটেস্টেণ্ট্‌ খৃষ্টীয় ধর্ম্মপ্রচারক আছেন, তন্মধ্যে অক্সফোর্ড মিশনের প্রচারকেরা এই অংলিকান্‌ দলভূক্ত। ইহাদের মধ্যে অনেকটা আচার নিয়মাদি দেখিতে পাওয়া যায়। আর ইহার অনেকটা রোমান্‌ ক্যাথলিক্‌দিগেরই মত। রোমান্ ক্যাথলিক্‌ খৃষ্টীয় মণ্ডলীতে যিশুখৃষ্ট্রের বিশেষ ভজনা হয়। এবং ইহারা খৃষ্টমূর্ত্তি ধ্যান করেন ও আপনাদের উপসনালয়ে যিশুখৃষ্টের, এমন কি যিণ্ড-মাতা মরিয়মের মূর্ত্তিও প্রতিষ্ঠিত করিতে কোনো কুণ্ঠা বোধ করেন না। সুতরাং ইহাদের খৃষ্টোপাসনা যে সাকার, ইহা অস্বীকার করা যায় না।

 আর প্রোটেস্টেণ্টগণ যদিও খৃষ্টমূর্তির প্রতিষ্ঠা করিয়া তাহার ভজনা করেন না, কিন্তু ত্রুশকাষ্ঠে আত্মবলিদান করিয়া পুণ্যচরিত্র যিশু জগতের পাপের যে প্রায়শ্চিত্ত করিয়াছেন, তাহার ধ্যান করিয়া থাকেন।