পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোটা দুই তিন কঠিন কথা।
২১

গুণাবতার, আবেশাবতার প্রভৃতির স্থান নাই। এখানে Word made flesh— ঈশ্বরের যে বাক্য অনাদি আদি হইতে। ঈশ্বরের সঙ্গে ছিলেন যিনি স্বয়ং ঈশ্বর-“God or very God—তাহাই রক্তমাংসে পরিণত বা প্রকাশিত হন। সুতরাং এখানে অবতারকে সাকার বলিতেই হয়। তবে যে আকারে যিশু ইহলোকে বিহার করিয়াছিলেন, তাহা সত্যই তাঁর দেহ ছিল,না কে বল মাত্র ছায়াবাজির ছায়ার মত ছিল, -এ প্রশ্ন প্রাচী খৃষ্টমগুলীর মধ্যেও উঠিয়াছিল। একদল লোকে যিশুর নরা্কৃতি যে রক্তমাংস গঠিত ছিল, ইহা বিশ্বাস করিতেন না, তাঁরা বলিতেন যে যিশুকে কে বল মানুষের মত দেখাইত মাত্র, বস্তুত তিনি মানব-দেহধারী ছিলেন না। আমাদের পরিভাষায় বলিতে গেলে, এই বলিতে হয় যে, ইহারা যিশুর মানবদেহকে “মায়িক” বলিয়া স্বীকার করিতেন, “কায়িক” বলিয়া মানিতেন না। কিন্তু খৃষ্টীয় মণ্ডলী ইহাদিগকে “হেরিটিক্‌” বা অবিশ্বাসী বলিয়া বর্জ্জন করেন। তদবধি যিশু যে নরদেহে সত্য সত্যই পৃথিবীতে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন, ইহা সকল খ্রীষ্টীয়ান্‌ মণ্ডলীই একবাক্যে স্বীকার করিয়া আসিতেছেন।! আর যিশু ও ঈশ্বরেতে যখন বস্তুত ও তত্ত্বত, Ousia বা Essenceএ, কোনই পার্থক্য নাই, তখন ঈশ্বরতত্ত্ব নিরাকার হইয়াও মানবাকার ধারণে যে তাহার মর্য্যাদাহানি হয় না, ইহা খৃষ্টীয়ান্‌ মাত্রেই স্বীকার করিবেন। সুতরাং খৃষ্ট-শিশুদিগকে কোনো ক্রমেই যথার্থ নিরাকারবাদী বলিয়া গ্রহণ করা যায় না।

ইস্‌লামের নিরাকারবাদ

 বর্ত্তমান সময়ে প্রতিষ্ঠিত ধর্ম্ম সকলের মধ্যে এক ইস্‌লামকেই অনেক পরিমাণে নিরাকারবাদী বলা যায়। “অনেক পরিমাণে” বলিতেছি এই হেতু যে, ইস্‌লামও দ্বৈততত্ত্বের উপরে প্রতিষ্ঠিত; সুতরাং দ্বৈতবাদে ঈশ্বর-