পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রথম সংস্করণের ভূমিকা

 শ্রীযুত বিপিনচন্দ্র পাল আমার বছদিনের বন্ধু। অন্য লক্ষ্য করিয়াছেন কি না জানি না, কিন্তু গত পনর বৎসরকাল তাঁহার হৃদয়ে ভাবের কেমন বিবর্ত্তন ঘটিতেছে, তাহা আমি লক্ষ্য করিয়াছি—এখনও করিতেছি। তাই তিনি জেলখানা হইতে ফিরিয়া আসিলে তাঁহার “জেলের খাতা” দেখিবার ভার যখন তামার উপর অর্পণ করেন, তখন আমি একটু সুখবোধ করিয়াছিলাম। কিন্তু আমার অদৃষ্টদোষে সময়াভাবে যেমন করিয়া দেখিয়া দিলে অমর মনোমত হইত “জেলের খাতা” আমি তেমন করিয়া দেখিয়া দিতে পারি নাই। তবে ভরসা এই যে, সমাজে এখন জহুরীর অভাব নাই, কাট-ছাট, ঘসা মাজ ভাল হউক আর নাই হউক, মাণিকের আদর অনেকেই করিবেন।

 আমি যাহা ভাল বুঝি ও ভাল দেখি তাহাকে ভাল না বলিয়া, আমার সর্ব্বস্ব— আমার ইহ পরকাল যে অতি সুন্দর, অতি মনোহর, অনুপম— এই কথাটা এখন সমাজে প্রচার করিতে হইবে। যে দীনতা লাভ করিলে এমন কথা মুখ ফুটিয়া বাহির হয়, এই পুস্তকে সেই দৈব দীনতার উৎপত্তি, বিস্তৃতি ও পরিণতি এক হিসাবে ব্যাখ্যাত হইয়াছে। আমার সব ভাল,— কলঙ্কও ভাল গৌরবও ভাল; আমার পাণ্ডিত্যের দাবদাহ ভাল, আমার অনন্ত অতীতের অপরিমেয় শ্লাঘাও ভাল। আর ভাল আমি এবং আমার দেবতা। শ্রীযুক্ত বিপিনচন্দ্র পাল ধর্ম্মের ও আত্ম নিবেদনের মন্দাকিনী ধারায় এই কথাই স্বয়ং বুঝিয়াছেন, অন্যকে বুঝাইতে চেষ্টা পাইয়াছেন। পাঠক পাঠিকারা বিপিনচন্দ্রের ভাবের ভাবুক হইয়া সমাজ সমষ্টির ও কৃষ্টির মর্য্যাদবুদ্ধির পুষ্টি করিলে তাঁহার পরিশ্রমও সার্থক হইবে, আমার উৎকণ্ঠাও প্রশমিত হইবে। ইতি—.


২৩শে মার্চ্চ ১৯১৩ খৃঃ অঃ।
শ্রীপাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়।