পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
প্রথম চিন্তা

তত্বে যে পরিচ্ছিন্নতা অপরিহার্য্যরূপে আরোপিত করে, তাহার দ্বারা ইস্‌লামের ঈশ্বরতত্ত্বেও একরূপ চিদাকার আরোপিত হইয়া থাকে; তথাপি ইস্‌লাম ইশ্বরের অবতার বা বিগ্রহ এ সকল কিছুই স্বীকার করেন না। সুতরাং হিন্দুধর্ম্মে কিম্বা খৃষ্টীয়ধর্ম্মে যে আকারের সাকারবাদ দেখিতে পাওয়া যায়, ইস্‌লামে সেরূপ কিছুই পাওয়া যায় না। তবে ইস্‌লামে স্বর্গের যেরূপ কল্পনা করিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার নিরাকারবাদ সম্বন্ধেও অনেকটা সন্দেহ উপস্থিত হয়। মুসলমান সাধকদিগের জীবনচরিত পাঠে এ সনেহ আরও দৃঢ় হইয়া উঠে। কারণ, ইস্‌লামের ঈশ্বরতত্ত্ব একান্ত নিরাকার যদিই বা হয়, মুসলমান সাধনতে সে নিরাকারত্ব সম্পূর্ণরূপে রক্ষিত হয় নাই।

ইস্‌লামের গুরুবাদ

 কারণ, ইস্‌লামে অবতারবাদ না থাকিলেও অতি পরিস্ফুট আকারে গুরুবাদ আছে। ইস্‌লাম অবতার অস্বীকার করিয়াও নবী বা প্রবক্তা স্বীকার করেন। ইহারা ঈশ্বরের প্রেরিত, ঈশ্বরের প্রিয়, ঈশ্বরের আদেশ প্রচার করিয়া লোক মণ্ডলীকে ধর্ম্ম পথে লইয়া যান। রসুলকে ছাড়িয়া কোনো মুসলমান খোদার দরজায় পৌঁছিতে পারেন না। সুতরাং হজরত্‌ মোহাম্মদ মুসলমান সাধনার অপরিহার্য অঙ্গ। গভীর যোগে ও সমাধিতে মুসলমান সাধকদিগের সমক্ষে হজরত্‌ মোহাম্মদ বা আলী প্রভৃতি তাঁহার আসন্ন পরিচারক ও শিষ্যগণের মধ্যে কেহ কেহ সর্ব্বদাই প্রকাশিত হইয়া থাকেন। যে সাধক এইরূপে ধ্যানযোগে আল্লার, রসুলের বা তাঁহার অনুচরগণের সাক্ষাৎকার লাভ করেন ইস্‌লাম তাঁহাকে অতি উচ্চ অধিকারী বলিয়া গণ্য করেন। সুতরাং তত্ত্বাঙ্গে একরূপ নিরাকার হইয়াও, সাধনা বলে, এট গুরুবাদ নিবন্ধন, ইস্‌লাম যে সাকার-আশ্রয় লইয়া থাকেন, ইহা অস্বীকার করা অসম্ভব।