পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোটা দুই তিন কঠিন কথা
২৩

সাকারোপাসনা— পরদেবোপাসনা

 অতএব, জগতে প্রাচীনকাল হইতে যে সকল ধর্ম্ম লোকসমাজে প্রতিষ্ঠালাভ করিয়াছে, তাহার আলোচনাতে দেখি যে, এক ভারতবর্ষে, নির্গুণ ব্রহ্মোণাসকদিগের দ্বারাই কেবল যথার্থ নিরাকারতত্ত্ব আয়ত্ত করিবার চেষ্টা হইয়াছিল। আর সকল ধর্ম্মেই কোথাও বা তত্ত্বাঙ্গে ও সাধনাঙ্গে উভয়ত, কোথাও বা অন্তত সাধনাঙ্গে, কোনো না কোনো আকারে সাকারবাদ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে। ইহুদী, খৃষ্টীয়ান বা ইস্‌লাম ধর্ম্মে যে আপাতত সাকারোপাসনার তীব্র প্রতিবাদ দেখিতে পাওয়া যায়। তাহার অর্থ একান্তভাবে সাকারোপাসনা বর্জ্জন করা নহে, কিন্তু পর দেবোপাসনা মাত্রকে বিগর্থিত বলিয়া প্রতিষ্ঠিত করা। ইহুদায় মুর্ত্তিপূজা পাপ বলিয়া পরিত্যক্ত হয়। ইহুদীর এই আদেশের বশেই খৃষ্টীয়ান মণ্ডলী মধ্যেও সাকারোপাসনা বর্জ্জিত হইয়াছে। ইস্‌লামও এই দশাণ্ডকে ঈশ্বরের আদেশ বলিয়া মানেন, এবং ইস্‌লামে সাবারোপাসনার বিরুদ্ধে যে তীব্র প্রতিবাদ দেখা যায়, তাহাও মূলে ইহুদা ধর্ম্ম হইতেই গৃহীত হইয়াছে। মোহাম্মদের সময়ে আরবে নানা প্রকারের দেব-দেবীর ভজনা বহুল পরিমাণে প্রচলিত ছিল। এই সকল দেবোপাসনার সঙ্গে প্রথম। হইতেই ইসলামের ঘোরতর প্রতিদ্বন্দিতা দাঁড়াইয়া যায়। ক্রমে এই দেবোপাসকদিগের সঙ্গে মোহাম্মদ ও তাঁহার শিষ্যগণের মারাত্মক বিরোধ উপস্থিত হয়, এবং ইহাদের হাতে প্রথমে হজরত্‌ ও তাঁহার ভক্তগণ নিরতিশয় লাঞ্জনা প্রাপ্ত হন। এই কারণে, বোধ্‌-পরস্তদের প্রতি স্বভাবতঃই ইস্‌লামের একটা গভীর বিধে জন্মিয়া যায়। আপনার মণ্ডলীর পবিত্রতা, অর্থাৎ পার্থক্য, রাখিবার জন্য মোহাম্মদকে অতি তীব্রভাবে এই সাকারাবাদের নিন্দা করিতে হয়। সুতরাং মূলত ইহুদীয়, খৃষ্টীয় বা মোহাম্মদীয় ধর্ম্মে যে সাকারাবাদ বর্জ্জিত হইয়াছে, তাহার মর্ম্ম নিরাকারবাদ