পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গোটা দুই তিন কঠিন কথা
২৭

আরেপিত হয় না। যাঁহার ব্রহ্মরূপে আপনার বিশিষ্ট প্রাণের ধ্যান করেন, তাঁহাদের প্রানাত্মবুদ্ধি নষ্ট হয় নাই। আর এই প্রাণাত্মবুদ্ধি, দেহাত্মবুদ্ধি অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হইলেও অবিদ্যান্তর্গত। প্রাণময় কোষ, কোষপঞ্চকের দ্বিতীয় কোষ। বেদান্ত বলেন য়ে, পঞ্চকোষ ভেদ না হওয়া পর্য্যন্ত অদ্বৈত ব্রক্ষাতত্ত্বে জীব কখনো পৌঁছিতে পারে না। সুতরাং প্রাণোপাসনা স্বরূপ উপাসনার অন্তর্গত বলিয়া গৃহীত হয় না। প্রাণেপাসনা সম্পদুপাসনা। প্রাণের সঙ্গে ব্রহ্মের সামান্য ধর্ম্ম আছে। ব্রহ্ম চৈতন্যস্বরূপ, প্রাণ চৈতন্যরূপী। প্রাণের মধ্যে প্রাণরূপে, প্রাণাবলম্বনে ব্রহ্মোপাসনা করিতে হইলে, প্রাণের এই চৈত্যাধর্ম্মকেই কেবল ধ্যান করিতে হইবে। প্রাণ যেমন চৈতন্যরূপীতেমনি জড়দেহেও আবদ্ধ, জড়ের দোষগুণের দ্বারা সর্ব্বদাই স্বল্পবিস্তর অভিভূত হয়। আবার প্রাণ গমনাগমনশীল, প্রকাশপ্রকাশাধীন। প্রাণের সংসার আছে, সংস্থিতি আছে। এ সকল ব্রক্ষে নাই। সুতরাং সমগ্র প্রাণকে, তার জড়সংশ্লিষ্টতা, গতাগতি, জন্মমৃতুজরাভিভূত প্রভৃতি বজ্জন না। করিয়া,—উপাসনা, এবং তাহার ধ্যান ধারণার চেষ্টা করিলে, তাহা সম্পদুপাসনা বলিয়া পরিগণিত হইবে না। মূল উপাস্যের সঙ্গে সম্পদের যে সামান্য ধর্ম্ম, তাহাই সম্পদুপাসনার প্রাণ; যখনই ধ্যান এই সামান্য ধর্ম্মের অতিক্রম করে তখনই ইহা নষ্ট হইয়া যায়।

সুর্য্যোপাসনা

 প্রাণোপাসনার ন্যায় সূর্য্যোপাসনাও বেদান্তে সম্পদুপাসনা বলিয়া পরিগণিত হয়। এখানেও ব্রহ্মের সঙ্গে সূর্যের যে সামান্যধর্ম্ম রহিয়াছে, তাহার প্রতি লক্ষ্য রাখিয়াই কেবল সুর্য্যের উপাসনা করিলে, তাহা সম্পদ্‌ বলিয়া পরিগণিত হইতে পারে, অন্যথা নহে। ব্রহ্ম স্বপ্রকাশ ও জগৎ প্রকাশক; ব্রহ্ম আপনাকে প্রকাশিত করিতে যাইয়া এই ব্রহ্মাণ্ডকে