পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাণের কথা
৩৩

 ইহাই প্রেমের উপজীব্য। প্রাণকে আমি জানি না, তাই এত ভালবাসি। যদি এ জনমে প্রাণকে ভাল করিয়া একবার জানিয়া ফেলিতে পারিতাম, তবে তার মায়া আপনি হয়ত কাটিয়া যাইত। বয়সের সঙ্গে যাদের প্রাণের মায়া সত্য সত্যই কাটিয়া যায় বুঝিবা তারা প্রাণকে ভাল করিয়া জানিয়া ফেলে। আর জানুক বা না জানুক, যতটা সম্ভব-একেবারে তারা শেষটা দেখিয়ছে, অন্ততঃ এ অভিমান তাদের জন্মে। নইলে প্রাণের মায়া ছুটে কিসে? তারা এই দেহকেই প্রাণ বলিয়া ধরিয়া লয়, এ সকল ইন্দ্রিয়কেই প্রাণ বলিয়া গণনা করে, তাই দেহ যত দুর্ব্বল হয়, ইন্দ্রিয় যত বিকল হয়, তাই প্রাণও শেষ হইয়া আসিতেছে ভাবিয়া, তা'র প্রতি মমতাশূ্ন্য হইয়া পড়ে। তারা যন্ত্রকে যন্ত্রী বলিয়া ধরে, আঁধারকে আধেয় বলিয়া ভাবে। যন্ত্রকে জানিয়াই যন্ত্রীকেও জানিয়া ফেলিয়াছে, তাঁর দৌড় কত তাহা দেখিয়াছে, মনে করে। তাই তাদের প্রাণের মায়া কমিয়া যায়। কিন্তু আমি এখনো প্রাণকে চিনিলাম না। প্রাণের স্বরূপ এখনো বুঝিলাম না, এ প্রাণের ভিতরে কত কি যে আছে না আছে, তার কিছুরই সন্ধান এখনো পাইলাম না। এ জন্ম বুঝি এই ভাবেই হবে। কত জন্ম যে এইভাবে যাবে তাহারই বা ঠিকানা কোথায়? বয়স বাড়িল, আয়ু ফুরাইতে চলিল, কিন্ধ এ প্রাণকে জানা হইল না, তাই ইহকে এত ভালবাসি। এ প্রাণের উৎপত্তি কোথায়, ইহার স্থিতি কিসে, ইহার গতি ও পরিণাম কি,—এ সকল কিছুই জানি না, কিছুই বুঝি না। খুঁজিতে গেলে, আপনাকে অনন্ত অসীমে হারাইয়া ফেলি। এ জনমে এতটুকু মাত্র মনে হয়, যেন বুঝিয়ছি যে এই প্রাণ হেয় বস্তু নহে। ইহা ক্ষুদ্র নহে। ইহার মধ্যে যেন এই বিশাল বিশ্ব লুকাইয়া আছে। জানিয়াছি শুধু এই যে, এ প্রাণ নিত্য বস্তু, শাশ্বত সনাতন। উর্দ্ধমুলোহবাকশাখঃ এযোহশ্বত্থ সনাতন,—মনে হয় এই প্রাণই সেই