পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
দ্বিতীয় চিন্তা

শ্রুতিকথিত সনাতন অশ্বখ বৃক্ষ যাহার মূল উদ্ধে অনস্ত দেবপিতৃলোকে, আর যাহার শাখা প্রশাখা নিয়ে এই নরলোকে অনন্তভাবে পরিব্যাপ্ত হইয়া আছে। এই প্রাণের উৎপত্তি কোথায় জানি না, জানি কেবল, পিতৃকুল, মাতৃকুল, দুই পবিত্র কুলধারা এই প্রাণেতে গঙ্গা যমুনার মত সম্মিলিত হইয়া ইহাকে পরম পবিত্র প্রয়াগ তীর্থে পরিণত করিয়াছেন। প্রতি নিঃশ্বাসে, প্রতি প্রশ্বাসে আমি আজন্মকাল এই পবিত্র সঙ্গমক্ষেত্রে স্নান করিয়া পবিত্র হইয়াছি। পিতাতে মাতাতে, দুই দুই প্রাণধারা মিলিত হইয়া তাঁহাদের প্রাণের সৃষ্টি করিয়া ছিল। অথবা তাই কেন বলি, তাঁদের মিলনে দুই নহে, চারি, চারি নহে, আট; আট নহে, যোড়শ; যোড়শ নহে, বত্রিশ; বত্রিশ নহে, চৌষট্টি; চৌষট্টি নহে শতাধিক, সহস্র।ধিক,—কত কুলধারা, কত প্রাণধার যে এক একটি প্রাণেত আসিয়া মিলিত হয়,তার সংখ্যা করে কে? এই প্রাণ ধরিয়া যখন উচ্চে বহিয়া চলি,—অল্পক্ষণ মধ্যে এক অসংখ্যশাখ, অনাদ্যনস্ত প্রাণস্রোতে গিয়া আত্মহারা হইয়া যাই। তখন দেখি এই প্রাণই পবিত্র সুরধুনী, সকল প্রাণের প্রতিষ্ঠ। বিষ্ণুপাদপদ্মে—এই প্রাণধারার উৎপত্তি। এই প্রাণের দিকে যখনই তাকাই তখন উদার-চরিত না হইয়াও, সমগ্র বসুধাকে কটুম্ব বলিয়া আলিঙ্গন করিতে সাধ যায়। কত শত কত সহজ কত লক্ষ, কত কোটী কোটী প্রাণধারা মিলিয়া একটী ক্ষুদ্র প্রাণের সৃষ্টি করে, তার গণনা করিবে কে? শত শত মন্বন্তর ব্যাপী প্রাণন চেষ্টার শেষ ফল রূপে এই ক্ষুদ্র প্রাণ ফুটিয়া উঠিয়াছে, ইহার মর্য্যাদার সীমা কোথায়? কত যুগ যুগান্ত ব্যাপিয়া, কত দেব, কত মানব, কত দেবর্ষি, কত রাজর্ষি, কত মহর্ষি, কত জ্ঞানী, কত কর্মীকত যোগীকত ভক্ত, কত আশা ভরে, কত যত্নে, কত আদরে, কত ভাবে, এই প্রাণের পরিচর্যা করিয়া, কত শিক্ষা দীক্ষা দিয়াআপনাদের আজন্ম সাধিত, সাধনসম্পত্তি দ্বারা অভিষিক্ত করিয়া, ইদানীং এই সংসারে, এক ক্ষুদ্র