পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রাণের কথা
৩৫

পরিবারে, এক নরদম্পতির পরম পবিত্র প্রাণষাগের যজ্ঞফলরূপে, এই ক্ষুদ্র প্রাণকে ফুটাইয়াছেন,—ইহা যখন মনে হয়, তখন, সত্য বলি, এ প্রাণকে আর আমার বলিতে সাহস হয় না। এ যে বিশ্বপ্রাণ—এ যে হিরণ্যগর্ভ; এ যে প্রজাপতি; পবিত্র পুরুষযজ্ঞে ইহার উৎপত্তি। যে যজ্ঞের দেবতা কাম, ছন্দ বেদমাতা গায়ত্রী, ঋষি বিশ্বস্য মিত্রং বিশ্বামিত্র; পুরুষ প্রেমস্নাত হইয়া যে যজ্ঞের অগ্নিতে আপনাকে আপনি শ্রদ্ধা সহকারে, আহুতিরূপে অর্পণ করেন, সেই মহাযজ্ঞ হইতে এই প্রাণের উৎপত্তি। এ প্রাণের মহত্ত্বের শেষ কোথায়? এমন প্রাণকে ভলেবাসি, ইহার জন্য লজ্জিত হইব কেন?

 এই বিশাল বিশ্ব এই প্রণকে আশ্রয় করিয়া আছে। এই জ্যোতির্ম্ময় সূর্য্যদেবতা, অনাদি কাল হইতে প্রাণের দ্বারস্থ হইয়া, ইহার নিকটে, নিয়ত আপনার জীবনের সম্যক সফলতা ভিক্ষা করিতেছেন। যে রূপ: তন্মাত্রা জ্যোতির্ম্ময় সবিতার প্রাণস্বরূপ, তাহা আপনার সার্থকতার জন্য এই প্রাণমুখাপেক্ষী চক্ষু দুটীর মুখ চাহিয়া আছে। চক্ষুর জন্য রূপের সৃষ্টি, না রূপের জ্ন্য চক্ষুর সৃষ্টি—কে বলিবে? তেজ আগে না চোখ আগে কে জানে? কি প্রাণের আশ্রয় করিয়া প্রাণের মধ্যে যে ইহারা পরস্পরের সফলতা সম্পাদন করে, এ তো প্রত্যক্ষ কথা,—ইহা অস্বীকার করিব কেমনে। যে শব্দতন্মাত্রা প্রাচীন ঋষিকুলপুঞ্জে আকাশ-দেবতার প্রাণ, তাহা আপনার সফলতার জন্য অতিযুগলের মুখাপেক্ষী হইয়া আছে। যে স্পর্শতন্মাত্রা বায়ুদেবতার প্রাণ তাহা সেইরূপ আপনাকে চরিতার্থ করিবার প্রত্যাশায় ত্বকের মুখাপেক্ষী হইয়া থাকে। যে রসতন্মাত্রা জল দেবতা বারুণীর প্রাণ, তাহা আপনার সফলতার জগ্য এই প্রাণমিশ্রিত রসনার প্রতি চাহিয়া থাকে। যে গন্ধতন্মাত্রা এই ধরিত্রী পৃথিবী দেবতার প্রাণ, তাহা এই ঘ্রাণেন্দ্রিয়ের আশ্রয়ে আপনার সফলতা লাভ করিয়া থাকে। পঞ্চতন্মত্রাত্মক এই পঞ্চ মহাভূত, পঞ্চভূতাত্মক, এই