বিশাল জগতপ্রপঞ্চ এই পঞ্চজ্ঞানেন্দ্রিয়ের, এবং এই পঞ্চেন্দ্রিয়, আপন সফলতা লাভের জন্য এই প্রাণের-শরণাগত হইয়াছে। এবং এই প্রাণই বিশ্বম্ভর,—বিশ্বকে ভরণপোষণ করিতেছে। সৃষ্টি-লীলায় এই প্রাণই মহাবিষ্ণু; ব্যষ্টিভাবে, এই প্রাণই ক্ষিরোদশায়ী, জীবান্তর্যামী; সমষ্টিভাবে, এই প্রাণই নারায়ণ বা বিশ্বমানব। এই প্রাণই ভগবানের পরা প্রকৃতি।
ভূমিরাপোইনলো বায়ুঃ খংমনোবুদ্ধিরেব চ। অহঙ্কারং ইতীয়ং মে ভিন্না প্রকৃতিরষ্টধা॥। অপয়েয়মিত স্ত্বন্যাং প্রকৃতিং বিদ্ধি মেইপরাম্। জীবভূতাং মহাবাহো যয়েদং ধার্য্যতে জগৎ॥
ভূমি, জল, অনল, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার, —আমার এই বিভিন্ন অষ্ট প্রকারের প্রতি। এ সকল আমার নিকৃষ্ট প্রকৃতি, আমার অন্য এক শ্রেষ্ঠ প্রকৃতি আছে, —যে জীবপ্রকৃতি, যাহা দ্বারা, হে মহাবাহো! আমি এই বিশাল বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে ধারণ করিয়া রহিয়াছি।
এই প্রাণই, এই পরা জীবপ্রকৃতি। এ প্রাণের দ্বারাই ভগবান সমুদায় জগৎ ধারণ করিয়া রহিয়ছেন। সৃষ্টিলীলায় এই প্রাণই লীলাময়ের প্রধান সহায়। এমন যে বস্তু, এমন যে মহান্, এমন যে পবিত্র পরম তত্ত্ব, তাহাকে ভালবাসি, ইহাতে লজ্জার কথা কি আছে?
তোমরা তা জান না। সংসারের লোকে সে খবর রাখে নি। কিন্তু যে দিন এই ক্ষুদ্র প্রাণ ভূমিষ্ট হয়, সে দিন এই বিশাল ব্রহ্মাণ্ডে সাড়া পড়িয়ছিল। দেবলোক, পিতৃলোক সিদ্ধলোক, গন্ধর্ব্বলোক, নরলোক, সুরলোক, যক্ষরক্ষ-অসুর-লোক,—সকল লোকে সে দিন সাড়া পড়িয়ছিল। বালকেরা নদীতীরে দাড়াইয়া ক্রীড়াচ্ছলে নদীগর্ভে উপলখণ্ড নিক্ষেপ করিয়া, নদীজলের তরঙ্গভঙ্গ দেখিয়া আমোদ করে তারা জানে না যে এই এক একটী সামান্য তরঙ্গে বিশাল সাগরবক্ষ পর্য্যন্ত অদৃশ্যে বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিতেছে। শিশুরা সাবান জলে ফুঁ দিয়া আকাশে বুদ্বুদ উড়াইয়া, তার গায়ে ইজধমুর রং ফুটাইয়া করতালি