পাতা:জেলের খাতা - বিপিনচন্দ্র পাল.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪০
দ্বিতীয় চিন্তা

জন্য, প্রভু ভৃত্যের জন্য, ভৃত্য প্রভুর জন্য, রাজার প্রজার জন্য, প্রজা রাজার জন্য, বন্ধু বন্ধুর জন্য, কারো জন্য কাহারো আর কোনো দায়িত্ব থাকে না।

  তুমি কার, কে তোমার, কারে বলরে আপন,

  মোহমায়া নিদ্রাবশে, দেখিছ স্বপন,

 ইহাই সংসারের সকল তত্ত্বের সারতত্ত্ব হইয়া দাঁড়ায়। স্নেহের, প্রীতির, প্রেমের, ভক্তির, দয়ার, দাক্ষিণ্যের, এ সকলের কিছুরই আর কোনো সত্য ও সারবত্তা থাকে না। এই যে পরম্পরাপেক্ষীভাব, ইহা হইতে স্নেহ, প্রেম, ভক্তি, দয়া, দাক্ষিণ্য কর্ত্তব্যাকর্ত্তব্য, ধর্ম্মাধর্ম্ম, সকলের উৎপত্তি। জীব কেবল আপনারই কর্ম্মফল ভোগ করিতে সংসারে আসে, কেবল আপনিই আপনার করে ভালমন্দ দ্বারা আবদ্ধ হয়, এ যদি সত্যই সত্য হয়, —তবে এ সকলের আর কোনো আশ্রয় রহিল কি? দশের কল্যাণের সঙ্গে একের কল্যাণ জড়িত, দশের ভালমন্দের উপরে একের ভালমন্দ প্রতিষ্ঠিত, দশের সুখের ভিতর দিয়া একের সুখ, দশের তৃপ্তির ভিতর দিয়া একের তৃপ্তি, দশের উন্নতির মধ্য দিয়া একের উন্নতির পন্থা,—এই যে সমাজস্থিতি হেতু, এই যে লোকধর্ম্ম —এ সকলের আর কোন প্রতিষ্ঠা থাকে কই? ফলতঃ জীব একাকী জন্মগ্রহণ করে, এ কথা সত্য; কিন্তু বহু লোকের বহু যুগের সঞ্চিত কর্ম্মের বোঝা মাথায় লইয়া সে জন্মায়, আর জন্মিয়া এই নিখিল বিশ্বের বিশাল কর্ম্মজালেতে সে আবদ্ধ হয়, এও অতি সত্য। যে কর্ম্মবোঝা লইয়া সে সংসারে আসে,তাহা এখানে আপনার স্বজাতীয় সমুদায় কর্ম্মকে টানিয়া আনে। পাপ পাপকে টানিয়া লয়, পুণ্য পুণ্যকে টানিয়া আনে। এইরূপে পরস্পরের সুকৃত দুষ্কৃতের বোঝা নিয়ত বাড়িয়া যায়। লৌহচূর্ণ মিশ্রিত গন্ধক চূর্ণের মধ্যে একখণ্ড চুম্বক ফেলিয়া দিলে যেমন আশে পাশের সমুদায় বিচ্ছিন্ন লৌহকণা তার গায়ে আসিয়া।