পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ধারে
৯৯

আনবি ভালো করে।’ চাকর নিয়ে এল। গরম গরম চা রুটি খেয়ে গড়গড়ার নলটি মুখে দিয়ে আরাম করে টানতে লাগলুম। তখন পাঁচটা বেজেছে, দাদা তেতলার সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে আমায় বারান্দায় বসে থাকতে দেখে অবাক। বললেন, ‘এ কি, তুমি যে বাইরে এসে বসেছ?’ বললুম, ‘ভালো হয়ে গেছি। দাদা।’ নেলি, করুণা, অলকের মা, তার উঠে দেখে বিছানায় রুগী নেই। গেল কোথায়? এঘরে ওঘরে খোঁজাখুঁজি করে বারান্দায় এসে সকলে চেঁচামেঁচি, ‘কখন তুমি আবার বাইরে উঠে এলে, একটুও জানতে পারিনি।’ বললুম, ‘জানবে কি করে, আমি যে ভালো হয়ে গেছি একেবারে। আর তোমরা ভেবো না মিছে।’ বলতে বলতেই মহেন্দ্রবাবু ডাক্তার এসে উপস্থিত। আমায় বারান্দায় দেখেই থমকে দাঁড়ালেন। বললুম, ‘আর আপনাদের দরকার নেই।’ মহেন্দ্রবাবু হেসে বললেন, ‘ভালো কথা, সেরে উঠেছেন তা হলে? খাওয়াদাওয়া কি করলেন? বেশ বেশ, এবারে সুস্থ মানুষের মত চলাফেরা করুন। দেখুন কি রকম আপনার রোগ তাড়িয়ে দিয়েছি আমরা।’ মহেন্দ্রবাবু থাকতে থাকতেই ডাক্তার ব্রাউন উঠে এলেন খটখট করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে। আমাকে কুশলপ্রশ্ন করতেই তার হাত ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে হ্যাণ্ডশেক করে বললুম, ‘গুডবাই, ডাক্তার। আর তোমার দরকার নেই, যেতে পারো তুমি।’ সাহেব হাসিমুখে চলে গেলেন।

 তাঁরা চলে যেতে মনে খটকা লাগল। ডাক্তারদের ফিরিয়ে দিলুম, বললুম, আর দরকার হবে না; কি জানি যদি আবার ব্যথা ওঠে বিকেলের দিকে। মনটা কেমন খুঁতখুঁত করতে লাগল। এমন সময়ে অমরনাথ হোমিয়োপ্যাথ ডাক্তার এসেছেন আমার খবর নিতে, তাঁকে বললুম, একটু হোমিয়োপ্যাথিই আমায় দিয়ে যাও, রেখে দিই। যদি ব্যথা ওঠে তো খাব।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই, আমি এখনি গিয়ে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ তিনি চলে যেতে এলেন বৃদ্ধ ডি. এন. রায়, তিনিও ডাক্তার, মাকে দেখতেন শুনতেন, প্রায়ই আসতেন, তিনি এসেছেন আমায় দেখতে—খবর রটে গিয়েছিল চারদিকে, আজ রাত কাটে কি না-কাটে, এমন অবস্থা। বৃদ্ধ এসেই বললেন, ‘হবে না লিভারে ব্যথা? এই বয়সে এতগুলি বই লেখা?’ ‘এতগুলি বই আবার কোথায়?’ তিনি বললেন, ‘তা নয় তো কি? বাড়ির মেয়েরা সেদিন পড়ছিল দেখলুম যে আমি।’ সে তো দুখানি মাত্র বই, শকুন্তলা আর ক্ষীরের পুতুল।’ ‘ওই হল। দুখানাই কি কম? এই বয়সে দুখানা বই লিখলে, এত এত ছবি