পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জোড়াসাঁকোর ধারে
১২৯

বোঝাবার আমি বলব বোঝাব।’ এই বলে তিনি তাকে কি সব বোঝালেন, ছবিখানার দাম কমালেন না, লর্ড কার্জনকেও দিলেন না। আমি শেষে কি করি, পদ্মাবতীর ছবিখানা ও অন্য ছবি যে দু-তিনখানা ছিল তা হ্যাভেলকে ধরে দিয়ে বললুম, ‘এই নাও সাহেব, আমার গুরুদক্ষিণা; এগুলি আমি তোমাকে দিলুম।’ সাহেব তো লুফে নিলেন। কি খুশি হলেন, বললেন, ‘আমি এ ছবি গ্যালারিতে রেখে দেব, যত্নে থাকবে চিরকাল।’

 এখন আমার মাস্টারি শুরু করার কথা বলি। সাহেব তো তার স্কুলে আমাকে নিয়ে বসালেন। সুরেন গাঙ্গুলী হল আমার প্রথম ছাত্র। সুরেনকে সাহেব তাঁত শেখাবার জন্য বেনারসে পাঠিয়েছিলেন। তাকে আবার ফিরিয়ে এনে আমাকে বললেন, ‘তুমি তোমার ক্লাস শুরু কর।’ সুরেন ও আর দু-চারটি ছেলেকে নিয়ে কাজ শুরু করে দিলাম। কিছুকাল বাদে সত্যেন বটব্যাল বলে এনগ্রেভিং ক্লাসের এক ছাত্র, একটি ছেলেকে নিয়ে এসে হাজির, বললে, ‘একে আপনার নিতে হবে।’ তখন মাস্টার কিনা, গম্ভীর ভাবে মুখ তুলে তাকালুম, দেখি কালোপানা ছোট একটি ছেলে। বললুম, ‘লেখাপড়া শিখেছ কিছু।’ বললে, ‘ম্যাট্রিক, এফ-এ পর্যন্ত পড়েছি। আমি বললুম, ‘দেখি তোমার হাতের কাজ।’ একটি ছবি দেখালে—একটি মেয়ে, পাশে হরিণ, লতাপাতা গাছগাছড়া; শকুন্তলা এঁকেছিল। এই আজকালকার ছেলেদের মতন একটু জ্যেঠামি ছিল তাতে। বললুম, ‘এ হবে না, কাল একটি সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি এঁকে এনো।’ পরদিন নন্দলাল এল, একটি কাঠিতে ন্যাকড়া জড়ানো, সেই ন্যাকড়ার উপরে সিদ্ধিদাতা গণেশের ছবি। বেশ এঁকেছিল প্রভাতভানুর বর্ণনা দিয়ে। বললুম ‘সাবাস’। সঙ্গে ওর শ্বশুর, দিব্যি চেহারা ছিল ওর শ্বশুরের, বললেন, ‘ছেলেটিকে আপনার হাতে দিলুম।’ আমি তাঁকে বললুম, ‘লেখাপড়া শেখালে বেশি রোজগার করতে পারবে।’ নন্দলাল জবাবে বললে, ‘লেখাপড়া শিখলে তো ত্রিশ টাকার বেশি রোজগার হবে না। এতে আমি তার বেশি রোজগার করতে পারব।’ আমি বললুম, ‘তা হলে আমার আর আপত্তি নেই।’ সেই থেকে নন্দলাল আমার কাছে রয়ে গেল। তখন একদিকে সুরেন গাঙ্গুলী এক দিকে নন্দলাল, মাঝখানে আমি বসে কাজ শুরু করে দিলুম।

 এখন এক পণ্ডিত এসে জুটে গেলেন—চাকরি চাই। আমি বললুম, ‘বেশ লেগে যান, রোজ আমাদের মহাভারত রামায়ণ পড়ে শোনাবেন। আমাদের বাল্যকালের পণ্ডিত মশায়, নাম রজনী পণ্ডিত। সেই পণ্ডিত

১৭