পাতা:জোড়াসাঁকোর ধারে.djvu/১৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪০
জোড়াসাঁকোর ধারে

শূন্য বেদি পূর্ণ করে বসবেন। সব তৈরি, এবার রথ চললেই হয়। বুঝেই ঠিক জায়গায় ঠিক রথটি নির্মাণ করেছিলেন শিল্পীরা।

 মন্দিরও বড় ভালো লেগেছিল। কি তার কারুকাজ। ওই দেখেই তো বলেছিলেম ওকাকুরাকে, ‘যাও, সূর্যমন্দির দেখে এসো।’ মন্দিরের সামনে বালির উপরে পড়ে আছে একটি মূর্তি, আধখানা বালির নিচে পোঁতা—যেন পাষাণী অহল্যা পড়ে আছে মন্দিরের দুয়ারে। অহল্যা আঁকতে হলে ওই মূর্তিটি এঁকো।

 সারাদিন কোনারকের মন্দির দেখে ডাকবাংলোতে থেকে বেলা কাটিয়ে বিকেল তিনটের সময় পালকি ছাড়লুম। আসছি আসছি। ফিরতি পথের শোভা, দূরে মৃগযূথ সব চলেছে—থেকে থেকে এক একবার দাঁড়ায় শিং তুলে, ঘাড় ফিরিয়ে। সে ছবি এঁকেছি। এই রকম চলতে চলতে আবার নিয়াখিয়া নদী পার হয়ে এলুম। সন্ধ্যে হয়ে এল, দেখলুম জগন্নাথের মন্দিরের ঠিক পিছনদিকে সূর্য অস্ত যাচ্ছে। ঝপ করে পালকি নামিয়ে দিয়ে বেয়ারার জগন্নাথের মন্দির ছাড়িয়ে অনেক দূরে চূড়োর উপরে প্রকাশ পাচ্ছে যে সূর্য তারই দিকে তাকিয়ে দু-হাত জুড়ে প্রণাম করে বললে, ‘জয় মহাপ্রভু! জয় মহাপ্রভু!’

 কিন্তু সত্যি বলব, এত সুন্দর সুন্দর মূর্তিগুলো দেখে লোভ হত। মনে হত রাবণের মত কোলে করে ঘরে নিয়ে যাই তাদের। সেই যে বালুর চরে আধখানা পোঁতা নায়িকা শুয়ে আছে আকাশের দিকে চেয়ে, দানবের শক্তি পেলে তুলে নিয়ে আসতুম।

 একবার সত্যি সত্যিই মূর্তি চুরি করতে গিয়েওছিলুম। সংগ্রহের বাতিক চিরকালেরই তা তো জানো? সমুদ্রের ধারে পাথর পড়ে থাকে, যেতে আসতে দেখি, খেয়াল করিনে তেমন। একদিন নুলিয়াদের দিয়ে পাথরখানা ঘরে নিয়ে এলুম, দেখি তাতে ভৈরবী কাটা। মা বললেন, ‘এ ভালো নয়, কোনো ঠাকুর-টাকুর হবে। পুরীর মাটিও ঘরে নিয়ে যাওয়া দোষ। ও তুই ফিরিয়ে দে যেখানকার জিনিস সেখানে।’ পরে এক সাহেব নিয়ে গেল তা, আমার ভাগ্যে হল না। কি আর করি? মূর্তি ভাগ্যে নেই, নুড়িটুড়ি সংগ্রহ করে বেড়াই।

 জগন্নাথের মন্দিরেও ঘুরি রোজ। নাটমন্দিরের ধারে ছোট্ট একটি ঘর, ছোট্ট দরজা, বন্ধই থাকে বেশির ভাগ। পাণ্ডা বললে, ভোগমূর্তি থাকে এখানে। জগন্নাথের বড় মূর্তি সব সময়ে নাড়াচাড়া করা যায় না, ওই মূর্তি দিয়েই কাজ চালায়। সে ঠিক ঘর নয়, একটি কুঠরি বললেই হয়। বললুম, ‘দেখতে চাই